ইয়েমেন থেকে হুথিদের চালানো ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলায় ‘আতঙ্ক’ ইসরায়েলে
ইয়েমেন থেকে হুথিদের নিক্ষেপ করা একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানায়, দেশটি বর্তমানে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে, দেশটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আকাশ হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে এবং লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটতে শুরু করেন। ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশেও সতর্কতা জারি করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঐ অঞ্চল থেকে ভারী বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে, যেটিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের ছোড়া ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র থেকে আসা আওয়াজ বলে জানিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু অংশ বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কফার দানিয়েল নামক একটি জনবসতিহীন এলাকায় পড়েছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যান্য অংশ মদীন শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ট্রেন স্টেশনের চলন্ত সিঁড়িতে পড়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রটি "মাঝ আকাশেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল," বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
হুথি বাহিনীর একজন মুখপাত্র (যারা ইয়েমেন-এর বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে) ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন এবং ইসরায়েলকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, তারা (ইসরায়েল) আরও "আঘাত ও বিশেষ অপারেশন" আশা করতে পারে।
রোববারের ঘটনয় প্রথমবারের মতো ইয়েমেন থেকে সরাসরি ভূমি-থেকে-ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
হুথি মুখপাত্র নাসরুদ্দিন আমের দাবি করেন, ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি "নতুন হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র", যা "শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাজিত করেছে"।
তিনি আরও বলেন, "এটি ১১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে ২ হাজার ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে এবং এটি ইহুদিদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি করেছে কারণ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুই মিলিয়নেরও বেশি ইহুদি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছে।"
নাসরুদ্দিন বলেন, "ভৌগলিক চ্যালেঞ্জ, মার্কিন-ব্রিটিশ আগ্রাসন এবং নজরদারি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা প্রিয় ইয়েমেনকে ফিলিস্তিনের প্রতি ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব পালনে বাধা দিতে পারবে না।"
হুথিদের এ হামলার জন্য "ভারী মূল্য" দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি রোববার একটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, এরকম পরিস্থিতি "আর হবে না"।
ইরান-সমর্থিত হুথিরা গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ চালিয়ে আসছে, বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ করতে চাপ সৃষ্টি করার জন্য। এ ছাড়া, তারা লোহিত সাগর অঞ্চলে জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
জুলাইয়ে হুথি ড্রোন হামলায় তেল আবিবে একজন নিহত এবং চারজন আহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে এবং ৮০ জনকে আহত করে।
এদিকে, গাজার হামাস-শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।