ইসরায়েলকে ৯/১১-এর 'ভুল' এড়াতে সতর্ক করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

গত ৭ অক্টোবর গাজা শসনকারী সশস্ত্র হামাস গোষ্ঠীর হামলায় ইসরায়েলকে প্রতিশোধের 'ক্রোধে অন্ধ' না হতে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন এলেভেন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন যে 'ভুল' করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) ইসরায়েল সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে তাকে এমন পরামর্শ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বুধবার একদিনের সফরে ইসরায়েলের প্রতি আন্তরিক সমর্থন দেখানোর পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় প্রথম মানবিক সহায়তা ট্রাক প্রবেশের অনুমতি বিষয়ক এক চুক্তিও উন্মোচন করেন তিনি।
এদিকে, মঙ্গবলবার (১৭ অক্টোবর) মধ্যরাতে গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় হয়নি, বরং 'অন্য দলের' দ্বারা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাইডেন। হাসপাতালে মারাত্মক ওই বিস্ফোরণ নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়লে পেন্টাগনের তথ্য উদ্ধৃত করে ইসরায়েলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাইডেন বলেন, বিস্ফোরণটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভুল নিশানায় রকেট ছোঁড়ার কারণে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে একইসঙ্গে বাইডেন এ বিষয়ে ইসরায়েলকে 'স্বচ্ছতার' স্থাপনের আহ্বানও জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমি সতর্ক করছি, ক্রোধে পড়ে অন্ধ হবেন না।" আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের উদাহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, "৯/১১-এর পরে, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। আমরা বিচার চেয়েছিলাম এবং পেয়েও ছিলাম; তবে একইসঙ্গে আমরা ভুলও করেছিলাম।"
এদিকে গাজা ছিটমহলে একটি সম্ভাব্য বাফার জোন স্থাপনের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন বুধবার দেশটির আর্মি রেডিওকে বলেন, এই যুদ্ধ শেষে শুধু হামাসই নিশ্চিহ্ন হবে না, বরং এতে গাজার ভূখণ্ডও কমবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন গাজায় স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল স্থল আক্রমণ চালালে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে (মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বাইডেন বলেন, গাজায় সম্ভাব্য স্থল আক্রমণের 'বিকল্প' পদক্ষেপ নিয়ে ইসরায়েলিদের সঙ্গে 'দীর্ঘ আলোচনা' হয়েছে। কারণ এ ধরনের আক্রমণে সেখানে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের কাছে তিনি সমর্থন প্যাকেজ চাইবেন বলেও উল্লেখ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এ বিষয়ে টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
ইসরায়েলকে গাজায় জরুরি সহায়তা যেতে দেওয়ার বিষয়ে নমনীয় হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
সফরকালে তেল আবিবের কর্মকর্তাদের বাইডেন বলেছেন, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাদেরকে (ফিলিস্তিনিদের) এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি না দিলে ইসরায়েল পুরো বিশ্বের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতো।
ইসরায়েল সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সময় বাইডেন আরও বলেন, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি মিশর-গাজা সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং ব্যবহার করে ২০ ট্রাক পর্যন্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছেন।
এর আগে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, দক্ষিণ গাজার বেসামরিক লোকেদের জন্য মিশরের সীমান্ত দিয়ে আসা কোনো মানবিক সহায়তায় বাধা দেবে না ইসরায়েল; তবে এই সহায়তা কেবল খাদ্য, পানি এবং ওষুধ হতে হবে।
এছাড়া, এই ত্রাণ সহায়তা শুধু বেসামরক নাগরিকদের জন্যই আসতে পারবে; এর মাধ্যমে গাজা শাসনকারী হামাস গোষ্ঠী কোনোভাবেই উপকৃত হতে পারবে না– এমন শর্তও দিয়েছে দেশটি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলি এক কর্মকর্তার মতে, মানবিক সহায়তার চালানগুলো কেবল দক্ষিণ গাজার পশ্চিম খান ইউনুসের একটি 'নিরাপদ এলাকায়' পৌঁছানোর পর তা আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস জানান, তারা গাজায় সাহায্য পাঠানোর 'সকল প্রচেষ্টাকে' স্বাগত জানিয়েছেন।
"মানুষের খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানি দরকার; এগুলো জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন তাদের। . . এ বিষয়ে দেরি মানেই এক একটি প্রাণহানি বা মৃত্যু," বলেন তিনি।
ফিলিস্তিনিদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, তারা আবারও গাজায় জ্বালানি আমদানি শুরু করতে চাইছে; কারণ জ্বালানির অভাবে এই অঞ্চলের পানির পাম্পিং এবং ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্টগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় খাবার, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। সীমিত পরিসরে কেবল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অনুমতি রয়েছে সেখানে।
১১ দিন ধরে চলতে থাকা হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩,৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন; অন্যদিকে, ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১,৪০০ জন।