নীরবে বাড়ছে ইউরোপে রাশিয়ার জ্বালানি প্রবাহ
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল না কেনার ইউরোপের সংকল্পে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।
ব্লুমবার্গের হিসাব করা তেলের ট্যাঙ্কারের তথ্য অনুসারে, ইউরোপের তেল শোধনাগারগুলো গত সপ্তাহে রাশিয়া থেকে প্রতিদিন ১.৮৪ মিলিয়ন বা প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনেছে।
টানা তৃতীয় সপ্তাহের মতো ইউরোপে রাশিয়ার তেলের সরবরাহ বেড়েছে। তুরস্কসহ সমগ্র ইউরোপে তেলের সরবরাহ দুই মাসের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
এর অনেকটাই অবশ্য রাশিয়ার বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী লিটাস্কোর জন্য ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটির শোধনাগারগুলোয় তেলের ব্যারেলের চালান যাচ্ছে। অন্যদিকে তুরস্কও তেল কেনা বাড়িয়েছে।
চলমান অবস্থা থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার তেল কিনতে চায় না তারা ইতোমধ্যে সরে গেছে। আগ্রহীরা তেল কিনলেও তাদের জন্য বাজার উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
ইউক্রেনে আক্রমণের পর বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করলে রাশিয়া বড় ধরনের মূল্যছাড় দেওয়া শুরু করে।
রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের বৃহত্তম দুই ক্রেতা অবশ্য এখনও চীন ও ভারত। সাপ্তাহিক হিসাব থেকে জানা গেছে এই তথ্য।
রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল থেকে বোঝাই করা সবগুলো কার্গোই চীনে যাচ্ছে। দেশটির অপরিশোধিত তেলের চালানের অর্ধেকই আসছে এশিয়ায়।
চলতি বছরের শুরুতেও যা ছিল প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
এশিয়ায় চীন ও ভারতই রাশিয়ার খনিজ তেলের মূল ক্রেতা। চীনে সমুদ্রপথে দিনে গড়ে প্রায় এক মিলিয়ন ব্যারেল তেল যায়। চলতি বছর দিনে ১৮ ফেব্রুয়ারির আগে চার সপ্তাহে দিনে সর্বনিম্ন ছয় লাখ ব্যারেল তেল গেছে।
রাশিয়ার সমুদ্রপথে রপ্তানিকৃত তেল কিনে ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। চলতি বছরের শুরুতে দেশটি দিনে মাত্র ২৫ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করত। ১৭ জুনের আগে গত চার সপ্তাহে দিনে গড়ে ছয় লাখের বেশি ব্যারেল তেল ভারতে যাচ্ছে।
ভারতের বাইরে রাশিয়া এখনও তেলের নতুন কোনো বড় গ্রাহক পায়নি।
ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে সমুদ্রপথে পাঠানো অপরিশোধিত তেলের দুই-তৃতীয়াংশ বাজারই রাশিয়া হারিয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পর তেল সরবরাহ হুট করে কমলেও এখন যে পরিমাণে যাচ্ছে তা স্থিতিশীল রয়েছে।
এ অঞ্চলে ১৭ জুলাই পর্যন্ত চার সপ্তাহে দৈনিক গড়ে সাড়ে চার লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়েছে। অথচ চলতি বছরের প্রথম চার সপ্তাহে সরবরাহের পরিমাণ ছিল দৈনিক গড়ে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ব্যারেল।
ডিসেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তেল সরবরাহের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও অধিকাংশ দেশ আগেই সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপুরিশোধিত তেলের আমদানি প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে ভূমধ্যসাগরের চিত্র ভিন্ন। এই অঞ্চলে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের চালান বেড়েছে।
এর একটি বড় অংশই যাচ্ছে অঞ্চলটিতে রাশিয়ার মালিকানাধীন তেল শোধনাগারগুলোতে, বিশেষ করে ইতালীয় দ্বীপ সিসিলির লুকঅয়েল আইএসএবি প্ল্যান্টে।
তুরস্কও রাশিয়ার তেল আমদানি বাড়িয়েছে। ফলে উত্তর ইউরোপের অপরিশোধিত জ্বালানি এখন তুরস্কে যাচ্ছে।
কৃষ্ণসাগরেও একই ঘটনা ঘটেছে। বুলগেরিয়ায় লুকঅয়েলের শোধনাগারে তেলের চালান বেড়েছে।
রোমানিয়ায় চলতি বছরের শুরুর থেকে চালানে পার্থক্য কিছুটা সামান্য হলেও বুলগেরিয়ায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির শুরুর থেকে সরবরাহ আড়াইগুণ বেড়েছে।
ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে রাশিয়ার জ্বালানির চালান এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল অভিমুখী হওয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলোর স্ব-আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব আপাতত তেমন একটা নেই বললেই চলে।
তবে ডিসেম্বরে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানিতে ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে আইএসএসবি কী করবে তা এখনও অজানা। ততদিন পর্যন্ত কোনো আইনি প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সীমিত পরিসরে ইউরোপে তেলের চালান অব্যাহত থাকবে। বিকল্প কোনো উৎস না পেলে আপাতত সরবরাহ কমার কোনো কারণ নেই। গত সপ্তাহে জ্বালানি রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় বাড়ে ৬ শতাংশ।
- সূত্র: স্ট্রেইটস টাইম