২০০৯ সালের পরে জন্ম নিলে ধূমপান নিষিদ্ধ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনায় সমর্থন দিলেন এমপিরা
২০০৯ সালের পরে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য সিগারেট কেনা নিষিদ্ধ— ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের এ পরিকল্পনাকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা এটিকে হাউজ অব কমন্সে প্রস্তাবনা আকারে পাস করিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পরিকল্পনাটি সাবেক দুই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীসহ নেতৃস্থানীয় টোরি সদস্যদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
হেলথ মিনিস্টার (স্বাস্থ্যসচিব) ভিক্টোরিয়া অ্যাটকিন্স ঋষি সুনাকের পরিকল্পনার প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়ে সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "আসক্তিতে কোন স্বাধীনতা নেই।"
'টোবাকো এন্ড ভ্যাপস' (তামাক এবং ভ্যাপ) বিলটি (প্রস্তাবনা) পার্লামেন্টে ৩৮৩টি ভোট পেয়ে পাস করেছে যেখানে এর বিপরীতে পড়েছে ৬৭টি ভোট। বিলটি আইনে পরিণত হলে যুক্তরাজ্যের এ ধূমপান আইন বিশ্বের সব থেকে কঠোর আইনগুলোর মধ্যে একটি হবে। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পরিকল্পনাটি নিউজিল্যান্ডের অনুরূপ ধূমপান আইন দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে ধারণা করা হয়। আইনটি পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের সরকার পরিবর্তনের পরে বাতিল করা হয়েছিল।
হাউস অফ কমন্সে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ভিক্টোরিয়া অ্যাটকিন্স বলেন, এ পরিকল্পনাটি 'ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম' তৈরি করবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস সহ বেশ কয়েকজন টোরি এমপি বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন, এ ধরনের আইন ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সীমিত করবে।
গত সপ্তাহে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কানাডার অটোয়াতে একটি কনজারভেটিভ সম্মেলনে ধূমপান নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে 'পাগলামি' বলে অভিহিত করেছিলেন।
কনজারভেটিভ দলের সংসদ সদস্যরা বিলটিতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছেন অর্থাৎ তাদের সরকারের সাথে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু লেবার পার্টির সমর্থন থাকায় বিলটি পাস করতে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।
বিলটি আইন আকারে পাস করার জন্য আরো কিছু ধাপ পার হতে হবে যেমন এটিকে হাউজ অব লর্ডসে পাস করাতে হবে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের মাঝামাঝি নির্বাচনের আগেই এটি আইন আকারে পাস হয়ে যাবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত বছরের অক্টোবরে একটি সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারির পর জন্মগ্রহণকারীদের জন্য তামাকজাত দ্রব্য কেনা নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনাটি জানিয়েছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস বিলটির বিরোধিতা করা প্রথমদিককার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। তিনি বলেছিলেন, "এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে একজন মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত যখন তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না তখন আমরা তাদের রক্ষা করি। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে রক্ষা করতে চাওয়ার বিষয়টি সমস্যাজনক।"
কনজারভেটিভ পার্টির আরো কয়েকজন সদস্য লিজের সাথে একমত পোষণ করেছেন। প্রাক্তন অভিবাসন মন্ত্রী রবার্ট জেনরিকও এ নীতির বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কারণ তিনি "ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী"।
তামাক ব্যবহার যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ যেহেতু দীর্ঘমেয়াদে ধূমপান করা ব্যক্তিদের দুই-তৃতীয়াংশ এতে মারা যায়। প্রতিবছর যুক্তরাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার ব্যক্তি ধূমপানের জন্য মারা যান। ইংল্যান্ডে প্রায় প্রতি মিনিটে একজন রোগীকে ধূমপানজনিত রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নতুন এ প্রস্তাবনায় সিগারেটের স্বাদ ও প্যাকেজিংয়ের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করার পাশাপাশি ভ্যাপকে শিশুদের কাছে নিষিদ্ধ করে তোলার লক্ষ্য রয়েছে।
ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ড অফিসাররা শিশুদের কাছে তামাক বা ভ্যাপ বিক্রি করে এমন দোকানগুলোকে তৎক্ষণাৎ একশ পাউন্ড জরিমানা করার নতুন ক্ষমতা পাবেন এবং আদায়কৃত সমস্ত অর্থ আরো নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হবে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন শিশু ভ্যাপ করার চেষ্টা করেছে এবং গত তিন বছরে ভ্যাপ ব্যবহার করা শিশুদের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে উত্থাপিত কোন প্রস্তাবনা বা বিল হাউজ অব কমন্স এবং হাউজ অব লর্ডসে অনুমোদিত হয়ে এবং রাজা (রাজ পরিবারের প্রধান) কর্তৃক রাজকীয় সম্মতি দেওয়ার পরে আইন আকারে পাস হয়।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়