কেন ফোন সঙ্গে রাখবেন? যোগাযোগ ও সার্বক্ষণিক নিরাপদ থাকার অনুভূতি দেয়
স্মার্টফোন ব্যবহার করার খারাপ দিকগুলো নিয়ে প্রায়শই আলোচনা হয়। তবে কিছু গবেষক এটি ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাবের দিকেও জোর দেন।
স্মার্টফোন ব্যবহার করার ফলে সমাজের মানুষের মধ্যে যে-সব খারাপ প্রভাব পড়েছে তার তালিকা দীর্ঘ। এই তালিকায় রয়েছে ফোকাস ও মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, ঘুমের সমস্যা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি।
এত কিছুর পরেও আমরা যেখানেই যাই না কেন, স্মার্টফোন সঙ্গে নিয়ে যাই। এর কারণ হিসেবে সহজ, নির্বোধ আসক্তি ছাড়াও অন্য ভালো ব্যাখ্যাও রয়েছে।
স্মার্টফোন ব্যবহারের সুবিধাগুলোও স্পষ্ট। স্মার্টফোন আমাদের যোগাযোগ করতে, যেকোনো তথ্য অ্যাক্সেস করতে, পেমেন্ট করতে, ছবি তুলতে, রাস্তা খুঁজে পাওয়াসহ আরো অনেক ক্ষেত্রেই সাহায্য করে। কিন্তু এসব ভালো দিক কি সব খারাপ দিকগুলোর ক্ষতিপূরণের জন্য যথেষ্ট?
আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফ্রাঙ্ক স্নাইডারের মতে, স্মার্টফোনের উপর নির্ভরতা বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ঠিকই। কিন্তু তার তুলনায় এটি ব্যবহারের ইতিবাচক দিকের বিষয়ে ফোকাস করে গবেষণার সংখ্যা কম।
মানুষের নেতিবাচক পক্ষপাতকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ফ্রাঙ্ক। তিনি ব্যাখ্যা করেন, "যেমন খারাপ খবর সাংবাদিকতায় বেশি ওজন বহন করে তেমনি বৈজ্ঞানিক জার্নাল বাজারেও একই জিনিস ঘটে।"
২০২৩ সালের এপ্রিলে 'কম্পিউটারস ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার' জার্নালে প্রকাশিত স্নাইডারের গবেষণায় শিশুদের কম্বল বা স্টাফড প্রাণীর মতো আরামের বস্তু হিসেবে স্মার্টফোনের ভূমিকার বিষয়ে বলা হয়। এটি করার জন্য তারা শুধু হাতে একটি সেল ফোন থাকার কারণে সামাজিক হুমকি বা বর্জনের শিকার হয় কি-না সেদিকে নজর দিয়েছিলো।
তাদের মূল ফলাফলে দেখা যায়, স্মার্টফোন একটি বাফার হিসাবে কাজ করে। যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তারা সামাজিকভাবে অন্যদের তুলনায় বেশি সংযুক্ত বোধ করেন। উপরন্তু, তারা এ উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, একটি স্মার্টফোনে থাকা তথ্যজনিত অ্যাপস এর চেয়ে সামাজিক অ্যাপস সম্পর্কে চিন্তা করার কারণে মানুষ তুলনামূলক কম অস্ট্র্যাসিজমের অনুভূতির শিকার হয়। তবে স্নাইডার বলেন, এ বিষয়ে আরও গবেষণা থাকা প্রয়োজন।
মস্তিষ্কে পরিবর্তন
ক্রমাগত সেল ফোন ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সব সময়ে এত বেশি তথ্যের অ্যাক্সেস থাকার কারণে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটি নয় তা জেনে ভালোভাবে ফিল্টার করা প্রয়োজন।
কাতালুনিয়ার ওপেন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক এবং স্নায়ুবিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ ডিয়েগো রেডোলার ব্যাখ্যা করেছেন যে, "প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স এতে আমাদের সাহায্য করে এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷"
স্মার্টফোন আমাদের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এবং তা হলো অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ করা। এক্ষেত্রে একাধিক লোক একসাথে থাকলে একে অপরের সাথে কথা বলার পরিবর্তে সবাই তাদের ফোনে ব্যস্ত থাকে। তখন প্রায়শই তাদের নিয়ে সমালোচনা করা হয়। তবে এমনও হতে পারে তারা এমন প্রয়োজনীয় কারো সাথে কথা বলছে যে ওইখানে উপস্থিত নেই।
আমাদের মস্তিষ্কে এমন কিছু কাঠামো রয়েছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নিউরোসায়েন্সে এটি সামাজিক জ্ঞান হিসাবে পরিচিত। এই ক্ষমতার দ্বারা আমাদের নিজেদেরকে অন্যের পরিস্থিতিতে রাখতে হয় তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য।
মোবাইল ফোন আমাদের এমন লোকেদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ দেয় যাদের সাথে হয়তো আমরা অন্যথায় যোগাযোগ করতে সক্ষম হব না। বিশেষ করে যারা সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভুগছেন বা দুর্বল পরিস্থিতিতে আছেন কারণ তাদের জন্য উপযুক্ত নেটওয়ার্ক নেই।
শুধু একটি সেল ফোন থাকার ফলে তারা নিরাপদ এবং সংযুক্ত বোধ করেন। এই বিষয়ে রেডোলার বলেন, "আপনার কাছে একটি সেল ফোন থাকা অ্যামিগডালার সক্রিয়তা হ্রাস করতে পারে, যা উদ্বিগ্নতায় প্রভাব ফেলে।"
তিনি বলেন, "শেষ পর্যন্ত বোঝার বিষয় এটা যে, আমরা যদি জঙ্গলে হারিয়ে যাই তবে উদ্ধারের প্রয়োজন হবে। তখন বিকল্প হিসেবে মোবাইল ফোন কাজ করবে। কিংবা খারাপ অনুভব হলে আমি কোনো বন্ধুকে কল করতে পারি।"
অনুবাদ: সৈয়দা শেহরিন