ডিএনএ পরীক্ষায় বেরিয়ে এলো মৃত ব্যক্তি জাপানের কুখ্যাত অপরাধী সাতোশি কিরিশিমা
নিজেকে জাপানের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীবলে দাবি করেছিলেন একজন মুমূর্ষু ব্যক্তি। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি সত্য বলেছিলেন।
সাতোশি কিরিশিমা জানুয়ারিতে তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশকে বলেছিলেন 'আমি আমার আসল পরিচয় নিয়েই আমার মৃত্যুকে বরণ করতে চাই।'
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ৭০ বছর বয়সী কিরিশিমা ১৯৭০-এর দশকে বেশ কয়েকটি মারাত্মক বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন।
পুরো জাপানজুড়ে তার ছবিসহ পোস্টার সাঁটানোর পরও তিনি ঠিক কীভাবে এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন, তা অস্পষ্ট।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, কিরিশিমাকে ১৮ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে টোকিওর গিঞ্জা জেলায় বোমা স্থাপন ও বিস্ফোরণে সহায়তা করার মাধ্যমে একটি বিল্ডিংয়ের কিছু অংশ ধ্বংস করার জন্য সন্দেহ করা হয়। যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা সেদিন ঘটেনি।
ওই সময় কিরিশিয়াম ইস্ট-এশিয়া অ্যান্টি-জাপান আর্মড ফ্রন্টের সদস্য ছিলেন। এটি একটি উগ্র বামপন্থী সংগঠন। ১৯৭০-এর দশকে জাপানের রাজধানী টোকিওতে বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বোমা হামলা চালানোর জন্য দায়ী মনে করা হয় এ গোষ্ঠীকে। এর মধ্যে মিত্সুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ ভবন লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। ওই ঘটনায় ৮ জন নিহত এবং ১৬০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিল।
ওই গ্রুপের চালানো একইরকম চারটি বোমা হামলার সাথে কিরিশিমা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। হামলায় জড়িত থাকার জন্য ওই গ্রুপের আরও দুই সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কিরিশিমাই এই দলের একমাত্র সদস্য যিনি কখনও পুলিশের হাতে ধরা পড়েননি।
লম্বা চুল, চশমা পরা ২০ বছর বয়সী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ছবি কয়েক দশক ধরে জাপানে থানার বাইরে পোস্টার আকারে প্রদর্শিত হয়েছিল। মাইনিচি পত্রিকায় তাকে 'শান্ত ও গম্ভীর' মানুষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিরিশিমা প্রায় ৪০ বছর ধরে হিরোশি উচিদা নামে টোকিওর পশ্চিম প্রান্তে ফুজিসাওয়া শহরে বসবাস করছিলেন বলে জানা গেছে।
জাপানের আসাহি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, কিরিশিমা পুলিশকে বলেছিলেন তিনি একটি নির্মাণ কোম্পানিতে কাজ করার আগে দিনমজুরের কাজ করতেন।
জাপানি ব্রডকাস্টার এনএইচকে বলেছে, তাকে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছিল। আর ধরা না পড়ার জন্য তিনি ফোন ব্যবহার করতেন না। তিনি টার্মিনাল ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাজির হওয়ার পর জানা যায়, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বা কোনো স্বাস্থ্যবিমা নেই। তখনই তিনি নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করেন। এরপর হাসপাতালের কর্মীরা পুলিশকে তার বিষয়ে জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, কিরিশিমা তার পরিবার এবং ইস্ট এশিয়া অ্যান্টি-জাপান আর্মড ফ্রন্টের ব্যাপারে বিশদ বিবরণ দিতে পেরেছেন যা শুধু তার পক্ষেই জানা সম্ভব। ২৯ জানুয়ারি মৃত্যুর আগে পুলিশকে এক সাক্ষাত্কারে কিরিশিমা এসব তথ্য দিয়েছিলেন।
একটি সূত্র জাপানের কিয়োদো নিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছে, কিরিশিমা কিছু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
টোকিও পুলিশের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন, ডিএনএ পরীক্ষার ফলে কিরিশিমার দাবি আরও পোক্ত হয়েছে। কিরিশিমার সঙ্গে যুক্ত মামলার ফাইলগুলো টোকিও জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে পাঠানো হয়েছে।
কিয়োদো নিউজের তথ্য থেকে আরও জানা যায়, এই পুরোটা সময় কিরিশিমাকে কেউ নাম-পরিচয় গোপন রেখে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করেছিল কি না, তা-ও পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।
- অনুবাদ: সেহরীন বিনতে রশীদ