গাজায় আবারও যুদ্ধবিরতির তাগিদ দিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

গাজা উপত্যকায় টানা এক মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় আবারও যুদ্ধবিরতির তাগিত দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। গতকাল সোমবার (৬ নভেম্বর) তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গাজার ভূমি যেন 'শিশুদের কবরস্থানে' পরিণত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে ৪,১০০ এর বেশি শিশু ও ২,৬৪১ জন নারী। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫,০০০।
এছাড়া, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত জাতিসংঘের অন্তত ৮৮ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। কোনো একক সংঘাতে জাতিসংঘকর্মীদের নিহতের সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ। হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৬ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী। এরমধ্যে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ৩১ জন।
একই সঙ্গে উপত্যকাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। বিদ্যুৎ, পানি, খাবার, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে চরম মানবিক সংকটে রয়েছে গাজার বাসিন্দারা। প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য ত্রাণসহায়তা পাচ্ছেন তারা।
গুতেরেস বলেন, "উপত্যকাজুড়ে প্রতিদিন শতাধিক ছেলে-মেয়ে হতাহত হচ্ছে। গত তিন দশকে হওয়া বিভিন্ন সংঘাতে যত না সাংবাদিক নিহত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি নিহত হয়েছে এই ইসরায়েল-গাজা সংঘাতে। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রাণ গেছে জাতিসংঘের আরো বহু কর্মীর।"
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে গুতেরেস সাংবাদিকদের জানান, বিপর্যয়কর এই পরিস্থিতি মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তাকে অতি জরুরি করে তুলেছে।
গুতেরেস বলেন, "ইসরায়েলিরা গাজার হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গীর্জা ও জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় কেউই নিরাপদ নয়।"
গুতেরেস গাজার বেসামরিক নাগরিকদের 'ঢাল' হিসেবে ব্যবহার এবং 'ইসরায়েলের দিকে নির্বিচার রকেট হামলা' অব্যাহত রাখায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে তিনি গাজায় জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানান।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে ১,৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়। জবাবে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে গাজার দুই লাখেরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ৩২ হাজারেরও বেশি ভবন। উপত্যকার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে পুরোপুরি চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে ১৬টি হাসপাতালে।
গুতেরেস বলেন, "এ সংঘাতে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। মানবিক সংকটের চেয়ে গাজায় ভয়ানক দুঃস্বপ্নই বেশি। এটি মানবতার সংকট।"
গাজায় আরো ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা বলেন গুতেরেস। তিনি বলেন, গাজার মানুষের 'সমুদ্র পরিমাণ প্রয়োজনের' সামনে এই ত্রাণ সহায়তা খুবই সামান্য। কেবল মিশরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত এই শূন্যতা পূরণে যথেষ্ট নয়।
গুতেরেসের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আল জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেস বলেন, যদিও জাতিসংঘ মহাসচিব নির্দিষ্টভাবে কোনো সীমান্তের কথা উল্লেখ করেননি, তবে সম্ভবত তিনি ইসরায়েল কর্তৃক অবরুদ্ধ গাজার অন্যান্য সীমান্ত যেমন– কেরেম শালম ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য খুুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এর আগে, ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হওয়ায় জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থা মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। গত মাসের শেষের দিকে মানবিক সহায়তার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাবও পাস হয়। কিন্তু এসবের কোনোটিতেই কান নেই ইসরায়েলের।