হার্ভার্ডের প্রাক্তন ছাত্র ও তার 'মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি'র থাইল্যান্ড নির্বাচনে বাজিমাত
থাইল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে একক দল হিসেবে সর্বোচ্চ ১৫১ টি আসন পেয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছে মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি। 'রিফরমিস্ট পার্টি' হিসেবে খ্যাতি লাভ করা এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র পিটা লিমজারোয়েনরাত। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ নেতা ও তার দলের বিস্তারিত উঠে এসেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে বড় জয়ের পথে থাইল্যান্ডের দুই বিরোধী দল- ফেউ থাই এবং মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। মোট ৫০০টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯২ টি আসন পেয়েছে এ দুই দল।
এরইমধ্যে 'মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি'র প্রধান পিটা লিমজারোয়েনরাত থাইল্যান্ডে এক ক্যারিশম্যাটিক রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
কে এই পিটা লিমজারোয়েনরাত?
প্রথম থাই নাগরিক হিসেবে 'ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট স্কলারশিপ' পেয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন পিটা লিমজারোয়েনরাত।
হার্ভার্ডের জন এফ. কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্ট থেকে পাবলিক পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে এমআইটির স্লোয়ান স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনেও মাস্টার্স করেন পিটা।
রাজনীতিবিদ হিসেবে পিটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচার শাসনের তুখোড় সমালোচনা করেছেন। একইসাথে প্রাউতের শাসনামলকে 'হারানো দশক' হিসেবে আখ্যায়িত করে জনগণের কাছে নিজেকে 'দিন বদলের দূত' হিসেবে তুলে ধরেছেন ৪২ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদ।
রাজনীতিতে যোগদানের আগে পিটা মূলত 'টিম পিটা' নামে পরিচিত ছিলেন। গ্র্যাব হোল্ডিং লিমিটেডের থাই ইউনিটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
একটা সময় ঋণে জর্জরিত পারিবারিক মালিকানাধীন রাইস ব্র্যান অয়েল কোম্পানি টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করতে হয়েছে বর্তমানের এই নেতাকে।
ব্যক্তিগত জীবনে পিটা বিয়ে করেছেন থাই মডেল ও অভিনেত্রী ছুতিমা তীপানার্টকে। এক কন্যা সন্তানের জনক তারা।
মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টির আবির্ভাব
'দ্য লিস ম্যাজেস্টি ল' হিসেবে পরিচিত একটি আইন অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের রাজা কিংবা রাজপরিবারের সদস্যদের মানহানি, অপমান কিংবা হুমকি দেওয়ার অভিযোগে থাই নাগরিকদের ১৫ বছর পর্যন্ত শাস্তির কঠিন বিধান আছে।
থাইল্যান্ডের মূলধারার প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা অন্যতম কঠোর এ আইনের বিরোধিতা করে।
মূলত 'সংস্কারবাদী এজেন্ডা' নিয়েই সর্বপ্রথম ভোটার ও তরুণ প্রজন্মের মনোযোগ আকর্ষণ করে মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি।
একইসাথে তারার দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব কমানোর অঙ্গীকারও করেছে। এছাড়া দলটির প্রধান পিটা নির্বাচিত হলে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দলটির পক্ষ থেকে 'ম্যারিজ ইকুয়ালিটি বিল' পাশে সমর্থন দেওয়া, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মনোপলি বন্ধ করা ও ব্যাংককের বাইরেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রসারের মতো অবস্থান নিয়েছেন। এতে করে তরুণ থেকে শুরু করে সকল স্তরের জনগণের মাঝে দলটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি। তবে মূলত 'দ্য ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি'র সদস্যদের নিয়েই পরবর্তীতে দলটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০২০ সালে 'দ্য ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি' নিজেদের কার্যক্রমের ইতি টানে। আর 'মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি' ধীরে ধীরে থাই রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে।
দ্য ইনস্টিটিউট অফ সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো থিটিনান পংসুধিরাক বলেন, "থাইল্যান্ডে মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি এখন নতুন এক ফ্যাক্টর। দেশটির তরুণ প্রজন্ম এখন মনেপ্রাণে সেনাবাহিনী ও রাজতন্ত্রে সংস্কার চায়।"
পিটা লিমজারোয়েনরাতের গণমাধ্যমে বিনিয়োগ বিতর্ক
থাই টেলিভিশন চ্যানেল 'আইটিভি' তে পিটা লিমজারোয়েনরাতের বিনিয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে, আর এ নিয়ে তৈরি হয় ব্যাপক বিতর্ক। কেননা দেশটির সংসদ সদস্যদের মধ্যে কেউ গণমাধ্যমে শেয়ার কিনলে তিনি সংসদের পদ হারাবেন।
সম্প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের কাছে পিটা লিমজারোয়েনরাতের বিরুদ্ধে আইটিভিতে ৪২ হাজার শেয়ার কেনার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। ২০১৯ সালে নিম্নকক্ষের সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি এ শেয়ার কিনেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
তবে আইটিভির শেয়ার কেনার অভিযোগটি অস্বীকার করে টুইট করেছেন পিটা। একইসাথে তিনি এ বিষয়ে নিজের অবস্থান দুর্নীতি দমন কমিশনকে ইতোমধ্যেই পরিষ্কার করেছেন।
গণমাধ্যমের মালিকানা ইস্যুতে বিরোধী পক্ষকে অভিযুক্ত করা থাই রাজনীতিতে খুবই পরিচিত ঘটনা। ২০২০ সালে গণমাধ্যমে শেয়ার কেনার অভিযোগে মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টির এক ট্রান্সজেন্ডার আইনপ্রণেতার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছিল। একই অভিযোগে ফিউচার ফরওয়ার্ড পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা থানাথর্নকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।