গরুর মিথেন গ্যাস যতই দুর্গন্ধময় হোক জলবায়ু-পরিবর্তন রোধে এর বিরুদ্ধে লড়াই দরকারি
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে গিয়ে কেন গরুকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে হবে, এমন কথা সহজেই বোধগম্য হবে না অনেকের। তবে পশুসম্পদের ক্ষেত্রে ঠিক এই পদক্ষেপটাই নিচ্ছে নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের সরকারগুলো। খবর রয়টার্সের
গরুর ঢেকুর ও বায়ুত্যাগের মাধ্যমে প্রতিবছর বিপুল মিথেন গ্যাস নিঃসৃত হয়, যা বার্ষিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের ১৫ শতাংশ বলে জানা গেছে জাতিসংঘের প্রাক্কলন অনুসারে।
গরুর পাচন প্রক্রিয়ায় এবং গোবর থেকে বিপুল মিথেন নির্গত হয়; বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করার দিক দিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়েও ৮০ গুণ বেশি কার্যকর এই গ্যাস। নিঃসরণের পর ২০ বছর পর্যন্ত এই গ্যাস সক্রিয় থাকতে পারে।
কৃষিখাতে মিথেন নিঃসরণের একটি প্রধান উৎস পশুসম্পদ, ২০২২ সালে যা জ্বালানি তেল শিল্পের চেয়েও তিনগুণ বেশি মিথেন নিঃসরণ করেছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)।
২০২১ সালের গ্লাসগো প্রতিশ্রুতি অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে ৩০ শতাংশ মিথেন গ্যাস কমাতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে, পশু খামারগুলোর ওপর নিঃসরণ সীমা আরোপের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এর আওতায় পশুসম্পদের পরিমাণ কমানো হবে।
কৃষিপণ্য নিউজিল্যান্ডের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। দেশটির মোট গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের অর্ধেকই করে কৃষিখাত। নিঃসরণ কমাতে পশু সংখ্যা, সার ব্যবহারের পরিমাণ এবং জ্বালানি ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে কৃষকদের ওপর করারোপের কথা ভাবছে নিউজিল্যান্ড সরকার।
যদিও এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন সহজ হবে না। ইউরোপে মোট গোমাংস উৎপাদনের ২৫ শতাংশই করেন জার্মানি ও ইতালির কৃষকরা। তারা নিঃসরণ সীমা আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। এই বাস্তবতায়, খামার শিল্পের মিথেন নির্গমন কমাতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এরমধ্যেই কিছু কোম্পানি গোখাদ্যে এমন উপাদান ব্যবহার করছে, যাতে গরুর ঢেকুর তোলা কমেছে।
তবে উন্নত প্রযুক্তি সব ধরনের খামারে চালু করা সম্ভব নয়, আর করলেও তাতে অনেক ব্যয় হবে, যা বাড়িয়ে দেবে উৎপাদন খরচ এবং ভোক্তাপর্যায়ে দুধ ও মাংসের দাম।
ইউরোপের দেশগুলো এনিয়ে বেশি কঠোর হলে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে, তাদের আমদানিকারকরা সৌদি আরবের মতো বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকবে, যেখানে কৃষি খাত আরো বেশি মিথেন নিঃসরণ করে। পাশাপাশি কড়া আইনের ফলে ছোট খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তাতে বৃহৎ সংস্থার বাজার নিয়ন্ত্রণও বাড়বে।
একটি ভালো বিকল্প হলো- ল্যাবরেটরিতে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থেকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাংস উৎপাদন। তবে এই মাংসের দাম খামারে উৎপাদিত মাংসের প্রায় দ্বিগুণ। খামারের মাংসের দাম বাড়লে এই ব্যবধান কিছুটা হলেও কমবে বলে জানিয়েছে গুড ফুড ইনস্টিটিউট। সংস্থাটির মতে, তখন ভোক্তারা কম-কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে উৎপাদিত বিকল্পের বিষয়ে উৎসাহী হবেন।
ক্রমবর্ধমান গবাদি পশুর সংখ্যা জলবায়ুর জন্য কতোটা বিপজ্জনক এনিয়ে বিতর্ক সামনে আরো হবে। তবে একইসঙ্গে ভোক্তা সচেতনতা তৈরিরও উদ্যোগ থাকতে হবে। সেদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে সরকারগুলোর প্রস্তাবিত নীতিসমূহ। পৃথিবীকে রক্ষায়– জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের বিরুদ্ধে এখন বিশ্বব্যাপী জোরালো সচেতনতা গড়ে উঠেছে। এখন প্রাণিসম্পদ নিয়েও নতুন অথচ অতি-জরুরি এক লড়াইয়ের সূচনা হচ্ছে।