কোভিড-১৯ এর প্রাকৃতিক সুরক্ষা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তবে নারীদের চাইতে পুরুষের শরীরে অ্যান্টিবডি দ্রুত কমে যায়
কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী সার্স কোভ-২ জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয় কিনা- তা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই মাথা ঘামাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর কারণ; প্রাকৃতিক সুরক্ষা দীর্ঘস্থায়ী হলে তাতে বাজারে আসা টিকাগুলো আরো ফলপ্রসূ হবে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তকোষে গড়ে ওঠা অ্যান্টিবডি বেশি সময় স্থায়ী না হলেও, সেটাই শেষ কথা নয়। শরীরের সামগ্রিক প্রতিরোধ ব্যবস্থায় অ্যান্টিবডি একটি সুরক্ষা স্তর মাত্র। দেহের অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থাও এখানে ভূমিকা রাখে।
তাছাড়া, মহামারির শুরু থেকেই দেখা গেছে পুরুষের চাইতে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। দ্বিতীয় জনসমষ্টির মধ্যে মৃত্যু হারও তুলনামূলক কম। এজন্যেই উভয় জনসংখ্যার বয়স ও গড় ওজন অনুপাতে তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্থায়িত্ব নির্ণয়ের চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা পদ্ধতি?
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ১৮৫ জন রোগীর মধ্যে সার্স কোভ-২ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষা বা ইম্ম্যিউনিটির মাত্রা পরীক্ষা করেন। এদের মধ্যে আবার ৪১ জনকে আবার সংক্রমণের ছয় মাস পর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়।
নমুনা জনসংখ্যার সিংহভাগই ছিল মৃদু উপসর্গের রোগী এবং তাদের কারো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়নি।
গবেষকরা তাদের ইম্যিউন রিসপন্সের চারটি প্রধান অনুষঙ্গ পরীক্ষা করেন। এগুলো হলো; অ্যান্টিবডির মাত্রা, মেমোরি বি সেল সংখ্যা (কোনো জীবাণু আক্রমণ করলে এই কোষগুলো তাকে মনে রাখে, এবং পরবর্তীতে সেটি আবার আক্রমণ করলে তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিকে সক্রিয় হতে সাহায্য করে), টি সেল (এর মধ্যে আবার আছে সিডি৪ ও সিডি৮ নামের দুটি কোষ। প্রথমটি বি সেলকে সাহায্য করে ও আর দ্বিতীয়টি সংক্রমিত কোষকে হত্যা করে)
ফ্রান্সের একটি হাসপাতালেও ছয় মাস মেয়াদি করা আরেক গবেষণায় একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ফলাফলও ছিল একই রকম।
গবেষণার ফলাফল:
রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ওজনের পঞ্চশোর্ধ বেশি বয়সের পুরুষদের দেহে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। দ্বিতীয়বার করা পরীক্ষায় নারীদের তুলনায় পুরুষের রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে আসার ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। নারীদের গড় ওজন বা বয়স এখানে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
বিশ্লেষণের পর গবেষকদের রায়, সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে নারীদের দেহে পুরুষের তুলনায় অনেক শক্তিশালী টি-সেল গড়ে ওঠে। আর টি-সেল শারীরিক প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও জীবাণু হত্যাকারী হওয়ায়, এর ফলে নারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়। কারণ এটি অন্যান্য প্রতিরোধ কোষকে সক্রিয় করে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের ভার নেয়।
ফলাফলের তাৎপর্য:
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে জীবাণুর আক্রমণ ঠেকানোর শারিরিক প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি একটি উপাদান মাত্র। তাই অ্যান্টিবডির নানা মাত্রা মানেই ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার পার্থক্য নয়। আর নারী ও পুরুষের দেহে তাদের যৌনতা বিষয়ক হরমোন, এক্স ক্রোমোজম এবং পরিবেশগত কারণে হতে পারে, বলে গবেষকরা জানাচ্ছেন। লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে হওয়া এই ব্যবধান দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ গড়ায় প্রভাব ফেলবে কিনা- তা আরো বিশ্লেষণের দরকার আছে বলেই তারা অভিমত প্রকাশ করেন।
- সূত্র: গ্যাভি ডটওআরজি