সাকিবের মুক্তিতে রোমাঞ্চিত সতীর্থরা
নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান- বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সংবাদ সম্মেলন করার আগেই খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল। মুহূর্তেই উত্তাল বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন। দলের সেরা ক্রিকেটার নিষেধাজ্ঞায়! বাংলাদেশ দলের অনেকেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। বিশ্বাস হচ্ছিল সাকিবের ভক্ত-সমর্থকদেরও।
সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পরদিন থেকেই কেউ কেউ দিন গণনা শুরু করেছিলেন। তাদের সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে, অপেক্ষা শেষ হয়েছে সাকিব ও তার সতীর্থদেরও। ২৮ অক্টোবর আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হচ্ছে সাকিবের। ২৯ অক্টোবর থেকে সব ধরনের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
দলের সেরা ক্রিকেটার ফিরছেন, ফিরছেন বড় ভাই, ফিরছেন একজন নেতা; জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই সাকিবের ফেরা নিয়ে রোমাঞ্চিত। এক বছর ক্রিকেটের সঙ্গে না থাকলেও আগের সাকিবকেই মাঠে দেখা যাবে বলে বিশ্বাস তাদের। সাকিবের ক্রিকেটে ফেরা নিয়ে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন
কেবল আমরা সতীর্থ বা ক্রিকেটাররা নয়, বাংলাদেশের কোটি কোটি ভক্ত সাকিব ভাইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমরা আরও বেশি আগ্রহী উনার সঙ্গে খেলতে। আমরা যারা জুনিয়র আছি, সবাই মুখিয়ে আছি।
সাকিব ভাই একজন সিনিয়র ক্রিকেটার, দলের অভিভাবকই বলা যায়। উনি অনেক অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার। দেশ ও দেশের বাইরে অনেক ম্যাচ খেলেছেন উনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে উনার অভিজ্ঞতা সব সময় জানার চেষ্টা করি। কঠিন অবস্থায় কীভাবে নিজেকে সামলে নিতে হয়, সেটা সাকিব ভাইয়ের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করি।
যদিও এক বছরের মতো সময় ধরে আমার ইনজুরি ছিল, আমি মাঠে সাকিব ভাইকে সেভাবে মিস করিনি। কারণ আমার খেলা হয়নি। তবে অপেক্ষায় আছি আবার এক সাথে দেশের হয়ে খেলব, যদি সুযোগ পাই। উনার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু শিখব।
সাকিব ভাই ভারত ও পাকিস্তান সফরে থাকলে ফল ভিন্ন হতে পারতো। এই দুই সফরে যারা খেলেছেন, তারা নিশ্চয়ই সাকিব ভাইকে অনেক মিস করেছেন। পুরো বাংলাদেশ দল সাকিব ভাইকে মিস করেছে। উনি যে মানের খেলোয়াড়, উনার অনুপস্থিতি সব সময় দল টের পাবে। সেটা যে ফরম্যাটের খেলাই হোক না কেন।
রুবেল হোসেন
সাকিব ভাইয়ের ফেরার খবরে খুবই খুশি লাগছে। কারণ সাকিব ভাই তো সাকিব ভাই-ই। সাকিব ভাইয়ের মতো ক্রিকেটারের উপস্থিতি একটা দলকে কতটা বুস্ট আপ করে, সেটা খুব সহজেই বোঝা যায়। খুবই ভালো লাগছে যে উনি ফিরছেন।
অবশ্য শুধু সাকিব ভাই নন, সিনিয়র ক্রিকেটার যারা আছেন, সবাই দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মধ্যে একজন না থাকলে সেটা দলের জন্য ক্ষতির, মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়তে হয়। দলের সবার কাছেই খারাপ লাগে যে এমন একজন ক্রিকেটার দলে নেই। সেখানে সাকিব ভাই তো স্পেশাল। উনি থাকলে দলের চাঙ্গা থাকে। দোয়া করি সাকিব ভাই আগের মতো শক্তিশালীভাবে ফিরে আসুক।
সাকিব ভাইকে অনেক মিস করেছি। যদিও সেভাবে ম্যাচ খেলা হয়নি, তারপরও মিস করেছি। কারণ জাতীয় দলে ঢোকার পর থেকে সাকিব ভাইয়ের সাথে খেলে আসছি। ব্যক্তিগতভাবে সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। যেখানেই খেলেছি, সাকিব ভাইকে মিস করেছি। কারণ উনি দলে থাকা মানেই এগিয়ে থাকা। ব্যাট, বল, ফিল্ডিং; সবখানেই অবদান রাখেন উনি। সেদিক থেকে আমাদের মতো পুরো দলই সাকিব ভাইকে মিস করেছে।
সাকিব ভাইয়ের মেধাই আলাদা। সাকিব ভাই একটু পরিশ্রম করলে বা একটু মনোযোগ বাড়ালেই উনার কাছে সব সহজ হয়ে যায়। অন্য পর্যায়ের মেধা উনার মধ্যে। সেদিক থেকে মনে হয় ভালোভাবেই ফিরবেন উনি। বিকেএসপিতে অনুশীলন করে গেছেন, আবার এখন থেকে দলের সঙ্গে করবেন। আমার মনে হয় খুব দ্রুতই মানিয়ে নেবেন তিনি। বাংলাদেশ দলে ফিরে ভালোই খেলবেন উনি।
নুরুল হাসান সোহান
সাকিব ভাইয়ের ফেরার অপেক্ষায় আমরা সবাই। ভালো লাগা কাজ করছে যে উনি দলে ফিরছেন। সাকিব ভাইয়ের মতো এমন একজন ক্রিকেটার যে কোনো দলের সঙ্গে থাকা মানেই তারা এগিয়ে। দলের মধ্যে বাড়তি অনুপ্রেরণা কাজ করে। সাকিব ভাইয়ের সাথে থাকা, খেলা; এসব করে অনেক কিছুই শেখা যায়। শুধু আমি নই, উনার মতো খেলোয়াড়কে সবাই মিস করেছে।
সাকিব ভাই একটা টুর্নামেন্টে থাকা মানে ওই টুর্নামেন্টের দাম বেড়ে যাওয়া। খুব বেশি ম্যাচ না খেললেও সাকিব ভাইকে মিস করছিলাম। অবশ্য সাকিব ভাইকেও বেশি ম্যাচ মিস করতে হয়নি। করোনার কারণে তো খেলাই বন্ধ ছিল। দুটি সিরিজ আর বিপিএল মিস করেছেন উনি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, করোনো শেষে খেলা শুরু হয়েছে, এবার সাকিব ভাইও ফিরছেন।
সাকিব ভাই যে মানের ক্রিকেটার, এক বছর বাইরে থাকলেও খুব বেশি প্রভাব পড়ার কথা নয়। আমার কাছে মনেহয় এটা তেমন ব্যাপার নয় উনার জন্য। সাকিব ভাই নিশ্চয়ই অনুশীলনের মধ্যে ছিলেন। আর আমরাও তো দীর্ঘ সময় খেলতে পারিনি। তো মনে হয় সাকিব ভাইকে চেনা রূপে দেখতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। দুই-একটি ম্যাচ খেললেই হয়ে যাবে। আমার মনে হয় আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে ফিরবেন তিনি।
তাসকিন আহমেদ
সাকিব ভাই ফিরছেন, এরচেয়ে ভালো খবর আর কী হতে পারে! সাকিব ভাইয়ের ফেরার খবরে খুবই ভালো লাগছে। উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের। উনি দলের সঙ্গে বা ড্রেসিং রুমে থাকলেও আমাদের অনেক ভালো লাগে। অনেক সাহস পাই।
সাকিব ভাই থাকলে দলের তো লাভ হয়-ই, আমরাও অনেক কিছু শিখতে পারি। উনার অনুশীলনের ধরন, ম্যাচে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন; এসব দেখে অনেক কিছুই শেখা যায়। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ হলো, এখানে সাকিব ভাইকে মিস করেছি।
আমি নিশ্চিত উনি আগের চেয়েও ভালোভাবে ক্রিকেটে ফিরবেন। উনার যে ক্রিকেটীয় মেধা, তাতে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে না বলেই আমার বিশ্বাস। এ কারণে মনে হয় খুব শক্তিশালী হয়েই ফিরবেন সাকিব ভাই।
নাজমুল হোসেন শান্ত
সাকিব ভাই ফিরে আসছেন ক্রিকেটে, আমাদের দলে ফিরছেন; এটা দারুণ ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এটা খুশির খবর। আমার পছন্দের ক্রিকেটার ফিরছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি রোমাঞ্চিত। আশা করছি উনি আগের মতো করে ফিরে আসবেন।
আমি বিশ্বাস করি সাকিব ভাইকে আগের মতো করেই দেখব। উনি যেভাবে এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, আমি আশা করি একইভাবে ফিরে আসতে পারবেন তিনি। উনি দলে থাকা মানে আমাদের শক্তি বেড়ে যাওয়া, হোক সেটা যে ফরম্যাটেই। সেরা ক্রিকেটারকে দলে ফিরে পাওয়া মানে শক্তি বেড়ে যাওয়া। একইভাবে আমাদের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য বড় সুযোগ তার মতো কারও কাছ থেকে শিখতে পারা।
বাংলাদেশ যে কয়টা ম্যাচই খেলেছে, সেখানে সাকিব ভাইয়ের অভাব বোঝা গেছে। উনি থাকা মানে দুজন ক্রিকেটার। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপেও সাকিব ভাইকে মিস করেছি আমরা। উনি ফিরছেন, অপেক্ষায় আবারও এক সঙ্গে খেলার।