কী আছে ২০২২ সালের ঝুলিতে? যা বলে গেছেন নস্ট্রাডামুস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি। বহু আগে নিখুঁতভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন হিটলারের মৃত্যু থেকে শুরু করে পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের কথা। তিনি ফরাসি জ্যোতিষী ও ডাক্তার নস্ট্রাডামুস।
১৫৫৫ সালে প্রকাশিত 'লে প্রফেতিয়েস' বইয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বহু পূর্বাভাস দিয়েছেন এই ফরাসি দার্শনিক। লোকে বলে, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উত্থানের ব্যাপারেও ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন 'ধ্বংসের পয়গম্বর' নামে পরিচিত নস্ট্রাডামুস। বাইবেলের বিভিন্ন টেক্সট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ও প্লেগ মহামারি থেকে অর্জিত নিজস্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি।
প্রকাশের ৪০০ বছর পরও নস্ট্রাডামুসের বই আজও তুমুল জনপ্রিয়। কারণ তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সম্পূর্ণ উন্মুক্ত এবং এসবের বহু রকমের অর্থ করা যেতে পারে। তার এসব ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আজও মানুষ অবাক হয়, মজাও করে—কিন্তু এই মানুষটিকে এড়িয়ে যেতে পারে না।
এই নস্ট্রাডামুস কিন্তু ২০২২ সাল নিয়েও করে গেছেন ভবিষ্যদ্বাণী। চলুন দেখে নেওয়া যাক আসন্ন বছর নিয়ে কী পূর্বাভাস দিয়ে গেছেন তিনি। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, ভবিষ্যদ্বাণীগুলো তো দেখে নেওয়াই যায়, কী বলেন?
জলবায়ু পরিবর্তন
১৫৫ সালে নস্ট্রাডামুস পূর্বাভাস দেন, জলবায়ু পরিবর্তন এমনই খারাপ দিকে যাবে যে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে সমুদ্রের মাছ আধাসেদ্ধ হয়ে যাবে।
তা হচ্ছেও। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। কোরাল রিফ নষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতির নানা দিকে পরিবেশগত নানা সমস্যা। তার এই ভবিষ্যদ্বাণী যেন অনেকটাই ফলে গেছে। বেড়ে গেছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা, গলতে শুরু করেছে হাজার বছর থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী দুই মেরুর বরফও। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে বিজ্ঞানী মহলে।
নস্ট্রাডামুস আরও পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানবজাতি ৪০ বছর বৃষ্টির মুখ দেখবে না। আর যখন বৃষ্টি নামবে, তার পানিতে দেখা দেবে 'মহাপ্লাবন'। সেই প্লাবনে ধ্বংস হয়ে যাবে সব জাতি।
গত কয়েক বছরে পৃথিবীতে তাপ প্রবাহের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্বাভাবিক বেড়েছে বন্যা ও খরার পরিমাণও। জাতিসংঘ বলছে, এরকম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন থেকে আমাদের ঘন ঘনই মোকাবিলা করতে হবে। কাজেই বলা যায়, নস্ট্রাডামুসের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটাই সত্যি হয়েছে।
গ্রহাণুর আঘাত
নস্ট্রাডামুস বলে গেছেন, পৃথিবীতে কোনো গ্রহাণু আছড়ে পড়বে! তাতে প্রাণ হারাবে অজস্র মানুষ।
গ্রহাণুর আঘাত কবে আসবে, তা এই জ্যোতিষীর বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। তবে তিনি লিখেছেন পৃথিবীতে আকাশ থেকে টানা তিন দিন বিশাল অগ্নিকুণ্ড ঝরে পড়বে।
পৃথিবী ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধানোর উপক্রম করেছে। ২০২১ সালে তো অল্পের জন্য গ্রহাণুর আঘাত থেকে বেঁচে গেছে পৃথিবীবাসী।
নাসা সতর্ক করে দিয়েছে প্রতি ২ হাজার বছরে একটি বড় গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। যা নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিলে যেতে পারে।
মূল্যস্ফীতির কারণে অভুক্ত থাকবে লাখ লাখ মানুষ
নস্ট্রাডামুসের আরেক ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, মূল্যস্ফীতি হবে আকাশছোঁয়া। তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পাশাপাশি মার্কিন ডলারের দামও চড়চড় করে কমে যাবে।
এর জেরে বিশ্বজুড়ে দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাবে পড়বে কোটি কোটি মানুষ। ভেঙে পড়বে অর্থনীতি।
নস্ট্রাডামুস আরও পূর্বাভাস দিয়েছেন যে বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাবের কারণে বাড়বে সংঘাত-সংঘর্ষ। কারণ প্রাকৃতিক সম্পদের দখল নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হবে মানবজাতি।
নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণীকে অনেকটাই সত্যি প্রমাণিত করে দিয়েই যেন পৃথিবীজুড়ে দেশে দেশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। করোনা মহামারির কারণে গ্যাস সরবরাহ সংকটে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি লাগামহীন। বেড়ে গেছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির জয়রথ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জয়-জয়কারের কথাও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন নস্ট্রাডামুস। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ 'অমর' হয়ে উঠবে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ২০২২ সালে রোবটের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাবে। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কও ঘোষণা দিয়েছেন, তার কোম্পানি আগামী বছর মানবসদৃশ রোবট আনবে। এসব রোবট কর্মস্থলে মানুষের জায়গায় কাজ করতে পারবে। আজ ইলন মাস্ক যা করছেন, তা কীভাবে এত বছর আগে অনুমান করলেন নস্ট্রাডামুস?
প্রেমিকদের জন্য সুখবর
নস্ট্রাডামুসের পূর্বাভাস অনুসারে, নতুন বছরটি প্রেমিকদের জন্য খুব ভালো যাবে। এই ফরাসি জ্যোতিষীর মতে, ২০২২ সালে যারা বিবাহিতদের দাম্পত্য সম্পর্ক আগের চেয়েও দৃঢ় ও মধুর হবে। সামগ্রিকভাবে, প্রেমের দিক থেকে এই বছরটি দুর্দান্ত যাবে বলে আভাস দিয়েছেন নস্ট্রাডামুস।
- সূত্র: ডেইলি মেইল