এবার করোনাভাইরাসের মারাত্মক আরেকটি ধরনের সন্ধান যুক্তরাষ্ট্রে
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আরও কয়েকটি স্থানে করোনাভাইরাসের মারাত্মক একটি ধরনের সন্ধান পেয়েছেন দুটি স্বতন্ত্র গবেষক দল। করোনা জীবাণুর এই বংশজ মারাত্মক হওয়ার কারণ, এটি মানবদেহের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ফাঁকি দেওয়ার শক্তি অর্জন করেছে। ফলে এর দ্বারা আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি চিকিৎসাও ব্যর্থ হবে।
জিন গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন বি.১.৫২৬। এটি নিউইয়র্ক শহরের নানান এলাকার বাসিন্দাদের আক্রান্ত করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারা জানান, 'এটি উত্তরপূর্বের সব অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছে।"
এই ধরনটির একটি অভিযোজিত বংশজের মধ্যে দ. আফ্রিকায় পাওয়া বি.১.৩৫১ ধরনটির মতোই একইরকম পরিবর্তনের মিল পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি অধিকাংশ ভ্যাকসিন প্রতিরোধ করতে পারছে না। ফলে সেটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে সংক্রমণের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও এখন সেই শঙ্কার মেঘ দেখা দিল।
মার্কিন গবেষকরা হুমকিটি যে বেশ জোরালো- তা স্পষ্ট করেই বলেছেন। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষকরা তাদের প্রতিবেদনে জানান, "গত ডিসেম্বর থেকে চলতি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ আমরা এটির সংক্রমণ হার বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্থির গতি লক্ষ্য করছি। এমনকি গত দুই সপ্তাহে নতুন ধরনটি শনাক্ত হওয়ার গতি ছিল ১২.৭ শতাংশ, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।"
প্রতিবেদনের মূল নিবন্ধটি এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহেই এটি মুদ্রণের আগে প্রথমে অনলাইনে প্রকাশিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের নিত্যনতুন ধরন আবিষ্কার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। চলমান মহামারিতে ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিনী আক্রান্ত হয়েছেন এবং টিকাদান কর্মসূচির পরও কিছু স্থানে এখনও সংক্রমণ প্রবল। তার মধ্যেই যেন জনস্বাস্থ্যের জন্যে নতুন হুমকি নিয়ে হাজির হলো সদ্য আবিষ্কৃত ধরনটি।
অ্যারন ডায়মন্ড এইডস রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক এবং গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ডা. ডেভিড হো- সিএনএন'কে এক ইমেইল বার্তায় জানান, " নতুন ধরনটি স্থানীয়ভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।"
জীবাণু একটি অনুপ্রাণ; এবং অভিযোজন এর টিকে থাকা ও বংশবিস্তারের একটি চলমান প্রক্রিয়া। যত বেশি লোক কোনো জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হন, সেটি ততো বেশি অভিযোজিত হওয়ার সুযোগ পায়। আক্রান্ত কোনো রোগীর দেহে একটি জীবাণুর একই ধরনের শত শত কোটি কপি থাকতে পারে, কিন্তু এরমধ্যে থেকেই কোনো কোনোটি আংশিক পরিবর্তিত বা সম্পূর্ণ অভিযোজিত হতে পারে।
কখনো কখনো অভিযোজিত কোনো বংশজ জীবাণুর টিকে থাকার জন্যে আদর্শ হলে, সেটাই তখন দীর্ঘসময় স্থায়ী হয়ে যায়। ফলে এটি অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে সহজে। একেই বলা হয় নতুন ধরন। এটি প্রচলিত ঘটনা হলেও, প্রাণঘাতী কোনো জীবাণু যখন টিকা এবং প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধকে ফাঁকি দেওয়ার মতো এই মারাত্মক সক্ষমতা অর্জন করে; তখনই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নড়েচড়ে বসেন। নিউইয়র্কের নতুন ধরনটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
নতুন ধরনের মধ্যে ভয়াবহ অভিযোজনটিকে বিজ্ঞানীরা ই৪৮৪কে সাঙ্কেতিক নাম দিয়েছেন।
"নতুন এধরনটি ব্যাপক আকারে ও আশঙ্কাজনক হারে গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বিপুল সংখ্যক রোগীর দেহে শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এটি ধারণার চেয়েও দ্রুত বংশবিস্তার করছে," গবেষণা নিবন্ধের উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরে সিএনএন'কে লেখা এক নোটে জানান বিজ্ঞানীরা।
"এটি যেভাবে ছড়াচ্ছে, অচিরেই তা অন্যান্য ধরনকে প্রতিস্থাপন করে সংক্রমণের মূল কারণ হবে বলে আমরা ধারণা করছি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্যেও একই ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে এই মুহূর্তেই তা নিশ্চিত করে বলার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আমাদের হাতে নেই।"
- সূত্র: সিএনএন