স্টিভ জবসের স্ত্রী ও ৪ সন্তানেরা এখন কে কোথায়, কী করছেন?
প্রযুক্তি বিশ্বে স্টিভ জবস যেন এক কিংবদন্তির নাম। তিনি ১৯৭৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হয়েছিলেন। তবে জবস সেখানেই থেমে থাকেননি। বরং বেশ তরুণ বয়সেই নিজের হাই স্কুলের বন্ধুকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল কোম্পানি।
জবসের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে সেদিনের অ্যাপল আজ পরিণত হয়েছে গ্লোবাল টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে কোম্পানিটির মূল্য ২ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি!
ব্যক্তিজীবনে জবস চার সন্তানের বাবা। এর মধ্যে হাইস্কুল জীবনের সঙ্গী ক্রিসান ব্রেনানের সঙ্গে স্টিভের লিসা ব্রেনান নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে। পরবর্তী জীবনে তিনি বিয়ে করেছিলেন লরেন পাওয়েলকে। তাদের ঘরে রয়েছে রিড, ইরিন ও ইভ নামের তিন সন্তান।
জবস ২০০৩ সালে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর আট বছর পর ৫৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লরেন পাওয়েল জবস, ৫৯
২০১১ সালে জবসের মৃত্যুর পর তার বিশাল সম্পদের বেশিরভাগেরই মালিক হন লরেন পাওয়েল। তার এই মালিকানার মধ্যে ছিল জবসের অ্যাপল ও ডিজনির শেয়ারও। ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার ইনডেক্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, লরেনের বর্তমানে সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
লরেন যখন ১৯৮৯ সালে স্ট্যানফোর্ডে এমবিএ করছিলেন, তখন তার সাথে জবসের পরিচয় হয়। জবসের মৃত্যুর পর থেকে লরেন জনহিতৈষী কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। একইসাথে ২০০৪ সালে তিনি সমাজ পরিবর্তনে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে 'এমারসন কালেকটিভ' নামের একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও লরেন টেক ফর আমেরিকা, কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালসহ বহু অলাভজনক সংস্থার বোর্ড অফ মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০২০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লরেন বলেন, "আমি জবসের কাছ থেকে বহু সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। জবস সম্পদ নিজের কাছে রাখতে হবে, এমন চিন্তা কখনোই করেননি। তাই বর্তমানে আমি তার সম্মানে সম্পদগুলো কার্যকর উপায়ে খরচ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। যাতে এগুলো ব্যবহার করে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর টেকসই উন্নতি করা যায়।"
লিসা ব্রেনান, ৪৫
লিসা ব্রেনানও বাবা স্টিভ জবসের কাছ থেকে মিলিয়ন ডলার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। তবে তিনি যে সবসময় তার ধনী বাবার কাছ থেকে সুবিধা লাভ করেছেন, বিষয়টি এমন নয়।
লিসা স্টিভ জবসের প্রথম সন্তান। তার মা ক্রিসান ব্রেনান একজন চিত্রশিল্পী ও জবসের হাই-স্কুল জীবনের সঙ্গী।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় ধরে জবস লিসাকে নিজের কন্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। এছাড়াও একসময়ের সঙ্গী ক্রিসান ও কন্যা লিসাকে তিনি আর্থিকভাবে খুব কমই সহযোগিতা করেছিলেন। প্রথমদিকে অবহেলার স্বীকার হলেও লিসা বাবার সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য কিশোর বয়সে স্টিভের কাছে চলে যান। যদিও খুব বেশি সময় তারা একসাথে কাটাতে পারেননি।
২০১৮ সালে লিসা লেখক হিসেবে 'স্মল ফ্রাই' নামের একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বাবা জবসের সাথে তার সম্পর্কের উত্থান পতনের গল্প তুলে ধরেন। একইসাথে অ্যাপলের লিসা কম্পিউটার যে তার নাম থেকেই নামকরণ করা হয়েছে, সেটিও উল্লেখ করেন।
বর্তমানে ব্রেনান বিয়ে করেছেন মাইক্রোসফটের সাবেক কর্মকর্তা ও টেক উদ্যোক্তা বিল মোরিনকে। বাবা জবসের সাথে সম্পর্কের এত জটিলতা থাকা সত্ত্বেও লিসা লালন-পালনের জন্য বাবার কাছে নানা সাক্ষাৎকারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
রিড জবস, ৩১
স্টিভ জবস ও লরেনের বিয়ের কয়েক মাস পরেই জন্ম নেয় ছেলে রিড জবস। শৈশব থেকেই তাকে খুব যত্নে বড় করেছেন বাবা স্টিভ। অল্প বয়সেই বাবার ব্যবসায় যুক্ত হন তিনি।
হাই স্কুলে পড়াকালীন স্টিভ জবস রিডকে হাওয়াই এ নিয়ে যান। সেখানে অল্প বয়সেই তিনি অ্যাপলের এক্সিকিউটিভসহ প্রযুক্তি জগতের বহু বড় বড় ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন।
২০১৪ সালে রিড স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ে স্নাতক পাশ করেন। পরবর্তী এক বছর ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর লাভ করেন তিনি।
এরপর রিড মায়ের প্রতিষ্ঠিত জনহিতৈষী প্রতিষ্ঠান এমারসন কালেকটিভে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। একইসাথে সেখানে তিনি একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন যেটি ক্যান্সার সম্পর্কিত গবেষণায় অর্থায়ন করে থাকে।
অবশ্য চলতি আগস্টে রিড জানান, তিনি এমারসন কালেকটিভ ছেড়ে 'ইয়োসেমাইট' নামের একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড শুরু করতে যাচ্ছেন। তবে নতুন এই প্রতিষ্ঠান থেকেও তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসায় অর্থায়ন চালু রাখবেন।
ইরিন সিয়েনা জবস, ২৭
স্টিভ জবসের সন্তানদের মধ্যে সম্ভবত ইরিনই সবচেয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেন। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে তার কোনো পাবলিক প্রোফাইল নেই। তবে ২০২১ সালে তার ছোট বোন ইভ ইন্সটাগ্রামে ইরিনের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন।
স্টিভ জবসকে নিয়ে লেখা জীবনীতে লেখক আইজ্যাকসন ইরিনকে 'শান্ত' ও 'অন্তর্মুখী' বলে অভিহিত করেছেন।
লেখক আইজ্যাকসনের কাছে অবশ্য বাবা জবসের সাথে আরও বেশি সময় কাটাতে না পারার আফসোস করেছেন ইরিন। তবে তিনি এও জানান, জবস বাবা হিসেবে ও অ্যাপলের সিইও হিসেবে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এবং সবকিছু ভালোভাবে পরিচালনা করেছেন।
ইভ জবস, ২৫
স্টিভ জবসের সবচেয়ে ছোট সন্তান ইভ জবস। তিনি পেশায় একজন মডেল এবং একজন দক্ষ অশ্বারোহী। ২০২০ সালে তিনি মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। মডেলিং শুরুর পূর্বে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন হর্স স্পোর্ট প্রকাশিত ২০১৯ অনূর্ধ্ব ২৫ র্যাংকিংয়ে ইভ শীর্ষ ১ হাজার অশ্বারোহীর মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে ছিলেন। ২০২০ সালের এক সাক্ষাৎকারে ইভ জানান, অলিম্পিক ও বিশ্ব অশ্বারোহী গেইমসে অংশ নেওয়া তার স্বপ্ন।
ইভকে নিয়ে সবসময়ই বেশ আশাবাদী ছিলেন বাবা স্টিভ জবস। বাবা হিসেবে তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে তার কনিষ্ঠ কন্যা ইভ একদিন অ্যাপলের দায়িত্বে আসবেন। এমনকি ইভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিও হতে পারেন বলে মনে করেছেন জবস।