৯২ বছর বয়সে মারা গেলেন পেন্টাগন পেপার্স ফাঁসকারী ড্যানিয়েল এলসবার্গ
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/06/17/rs-183154-114158128_0.jpg)
ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের চাঞ্চল্যকর নথি 'পেন্টাগন পেপারস' ফাঁসকারী ড্যানিয়েল এলসবার্গ মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২। খবর বিবিসির।
শুক্রবার (১৬ জুন) ক্যালিফোর্নিয়ার কেনসিংটনে নিজ বাড়িতে মারা যান যুক্তরাষ্ট্র নৌ বাহিনীর সাবেক এই সদস্য।
এলসবার্গের মৃত্যুর খবরটি তার পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি।
১৯৩১ সালে শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করা এলসবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সামরিক বিশ্লেষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় হোয়াইট হাউসে পরমাণু অস্ত্র কৌশল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন এলসবার্গ। ১৯৬০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাকে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিয়েতনামে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণে পাঠানো হয়।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/06/17/rs10644_rla_danielellsberg_17may2018_007-scaled.jpg)
যুদ্ধকালীন ভিয়েতনামে অবস্থানকালে এলসবার্গ একেবারে কাছ থেকে যুদ্ধে মার্কিন অবস্থা বিশ্লেষণ করেন। এতে তার মনে হয়েছিল, মার্কিন সেনাবাহিনীর পক্ষে ভিয়েতনাম যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়।
এমনকি এলসবার্গ ভিয়েতনাম যুদ্ধ সংক্রান্ত গোপন তথ্য সম্পর্কে জানার পর বুঝতে পারেন যে, মার্কিন সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করতে প্রতিনিয়ত মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। তাই তিনি দেশে ফিরে প্রকৃত তথ্য দেশবাসীকে জানিয়ে রাজনৈতিক চাপে যুদ্ধ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন।
সেই ভাবনা থেকেই আমেরিকার সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকদের কাছে এলসবার্গ মার্কিন সরকারের বহু গোপন নথি-পত্র তুলে দেন। যার ভিত্তিতে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয় ৭ হাজার পৃষ্ঠার বিস্ফোরক 'পেন্টাগন পেপারস'।
সংবেদনশীল তথ্যগুলো প্রকাশের পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হন। একইসাথে সংবাদপত্রে ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদনের প্রকাশ রুখতে ও এলসবার্গকে শায়েস্তা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে নিক্সন প্রশাসন।
শেষ পর্যন্ত মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। তবে ড্যানিয়েলের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ শেষ পর্যন্ত খারিজ হয়ে যায়। এছাড়াও মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে সংবাদপত্রের পক্ষেই মত দেন।
২০১৭ সালে তথ্য ফাঁসের এই কাহিনির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে হলিউডের সিনেমা 'দ্য পোস্ট'। এছাড়াও ২০০২ সালে এলসবার্গ 'সিক্রেটস: এ মেমোয়ার অব ভিয়েতনাম এন্ড দ্য পেন্টাগন পেপারস' নামে বইও লিখেন।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/06/17/capture_1.jpg)
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এলসবার্গের ফাঁস করা নথির বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল। নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার তাই তৎকালীন সময়ে এলসবার্গকে 'আমেরিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি' বলে অভিহিত করে যেকোনো মূল্যে তাকে থামানোর কথা বলেছিলেন।
এলসবার্গের মৃত্যুর পর প্রকাশিত বিবৃতিতে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, "এলসবার্গ ছিলেন একজন সত্যের সন্ধানকারী, দেশপ্রেমিক সত্য-বক্তা, যুদ্ধবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট। একইসাথে তিনি ছিলেন অনেকের প্রিয় বন্ধু ও অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণা।"
দ্য গার্ডিয়ানের সাবেক চিফ এডিটর এলান রুসব্রিজার এলসবার্গকে 'দ্য গ্র্যান্ডফাদার অফ হুইসেলব্লোয়ারস' বলে অভিহিত করেছেন।
বর্তমান সময়ের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কিংবা এডওয়ার্ড স্নোডেনের মতো হুইসেলব্লোয়াররা এলসবার্গ দ্বারা অনুপ্রাণিত বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
রুসব্রিজার বলেন, "এলসবার্গের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ভিয়েতনাম যুদ্ধ সম্পর্কে মার্কিন জনমতের আমূল পরিবর্তন করেছিল।"
'পেন্টাগন পেপারস' ফাঁসের ঘটনার পর বাকি জীবনেও এলসবার্গ সবসময় মার্কিন সরকারের সমালোচনায় মুখর থেকে জবাবদিহিতার অধীনে আনতে চেষ্টা করে গেছেন।
২০২২ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এলসবার্গ জানান, ২০১০ সালে উইকিলিকসের নথি ফাঁসের পেছনেও তিনি একজন গোপন 'ব্যাক-আপ' হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
গত মার্চে ওয়াশিংটন পোস্টে দেওয়া এক ইমেইলে এলসবার্গ বলেন, "১৯৬৯ সালে আমি যখন পেন্টাগন পেপারস ফাঁসের জন্য কপি করছিলাম, তখন আমি ভেবেই নিয়েছিলাম যে, জীবনের বাকি অংশ আমাকে জেলেই কাটাতে হবে। তবে এতে করে ভিয়েতনাম যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ হতে পারে ভেবে আমি জেলের ভাগ্য সানন্দে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলাম।"