প্রস্রাবকে সুপেয় পানিতে পরিণত করতে পারবে যে স্পেসস্যুট
প্রস্রাবকে সুপেয় পানিতে পরিণত করতে পারে, এমন একটি স্পেসস্যুট আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে নভোচারীরা হয়তো মহাকাশে নির্বিঘ্নে আরও বেশি সময় কাটাতে পারবেন।
স্পেসস্যুটের এই প্রোটোটাইপ প্রস্রাব সংগ্রহ করে সেটি পরিশোধন করে ড্রিঙ্কিং টিউবের মাধ্যমে নভোচারীকে ফেরত পাঠাতে পারে। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট।
এ স্যুটের প্রস্তুতকারকরা আশা করছেন, চলতি দশকের শেষদিকে নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামে পোশাকটি কাজে লাগানো যাবে। আর্টেমিস কর্মসূচির আওতায় পৃথিবীর বাইরে কীভাবে জীবনধারণ ও কাজ করা যায়, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ স্পেসস্যুটের অন্যতম ডিজাইনার, গবেষক সোফিয়া এটলিন গার্ডিয়ানকে বলেন, এতে একটি ভ্যাকিউয়াম-ভিত্তিক বাহ্যিক ক্যাথিটার (মূত্রনিষ্কাশন যন্ত্র) রয়েছে। আর আছে একটি অভিস্রবণ ইউনিট। নভোচারীর স্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য একাধিক নিরাপত্তা পদ্ধতির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এ স্যুটের মাধ্যমে নভোচারী নিরবচ্ছিন্ন পানযোগ্য পানি পাবেন।
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) ইতিমধ্যে নিয়মিত মূত্র ও ঘাম রিসাইকেল করা হচ্ছে। তবে নভোচারীরা অভিযানের জন্য মহাকাশযানের যখন বাইরে যাবেন, সেই সময়ের জন্য একই ধরনের রিসাইকেল ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে জানান এটলিন। কারণ, স্পেস স্টেশনের রিসাইকেল ব্যবস্থা স্পেসস্যুটে কাজ করে না।
এটলিন বলেন, 'নভোচারীরা এখন তাদের স্পেসস্যুটের ড্রিঙ্ক পাউচে মাত্র চার কাপের মতো পানি রাখতে পারেন। চাঁদে যেরকম লম্বা সময় হাঁটাহাঁটির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তার জন্য এই পানি যথেষ্ট না। চাঁদে তাদের ১০ ঘণ্টা, কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি করতে হতে পারে।'
এছাড়া বর্তমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও অনেকদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছেন নভোচারীরা। ম্যাক্সিমাম অ্যাবজর্বেন্সি গার্মেন্ট (এমএজি) নামক এই ব্যবস্থা মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বড়সড় ডায়াপার।
এখনকার পোশাক প্রায়ই ছিদ্র হয়ে যায়। এছাড়া এগুলো অস্বস্তিকর এবং অস্বাস্থ্যকরও বটে। এ কারণে অনেক নভোচারী মহাশূন্যে বের হওয়ার আগে খাওয়া ও পানি পান কমিয়ে দেন, আবার অনেকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বা মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হন।
নতুন স্পেসস্যুট ডিজাইন করার সময় নভোচারীদের ওপর জরিপ চালিয়েছেন এটলিন। তিনি বলেন, 'হরহামেশাই এমএজি লিক হয়ে যায়। নভোচারীরা বলেন, একপর্যায়ে তারা আর প্রস্রাব আর ঘামের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। তারা তখন নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দেন: "আমি নভোচারী, এই ভার আমাকেই বইতে হবে।"'
তবে ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক নভোচারীরা স্পেসস্যুটের বর্তমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে এত উদার মনোভাব পোষণ করবেন না বলেই মনে করেন এটলিন।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ম্যাসন। নিজেদের ডিজাইন করা স্পেসস্যুট নিয়ে তিনি বলেন, এ পোশাক নভোচারীদের জন্য তুলনামূলক ভালো হতে পারে।
'স্টিলস্যুট' নামের এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে নভোচারীর জননেন্দ্রিয়ের চারপাশে একটি সিলিকনের কাপ স্থাপন করা হয়। পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা আকারের ও আলাদা গড়নের কাপ রয়েছে। একাধিক নমনীয় ফ্যাব্রিকের স্তর দিয়ে বানানো অন্তর্বাসের ভেতরে থাকে এই কাপ।
সিলিকনের কাপটি একটি ভ্যাকিউয়াম পাম্পের সঙ্গে যুক্ত থাকে। নভোচারী প্রস্রাব শুরু করলে পাম্পটি আপনাআপনি চালু হয়ে যায়। কাপে জমা হওয়ার পর মূত্রকে পরিস্রাবণ ব্যবস্থায় পাঠানো হয়। সেখানে রিসাইকেল করে ৮৭ শতাংশ প্রস্রাবকে পরিচ্ছন্ন পানিতে পরিণত করা হয়। মূত্র থেকে অভিস্রবণ পদ্ধতিতে পানিকে আলাদা করা হয়। এছাড়া লবণ থেকে পানিকে আলাদা করার জন্য একটি পাম্প ব্যবহার করা হয়।
৫০০ মিলিলিটার মূত্র সংগ্রহ করে পরিশোধন করতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট। পরিশোধিত পানির সঙ্গে ইলেক্ট্রোলাইট মিশিয়ে একে নভোচারীর জন্য এনার্জি ড্রিঙ্কে পরিণত করা যায়।
এই গোটা ব্যবস্থার ওজন প্রায় ৮ কেজি। প্রস্তুতকারকরা মনে করছেন, ব্যবস্থাটি স্পেসস্যুটে বহন করার মতো যথেষ্ট ছোট ও হালকা। নতুন ডিজাইন করা এ স্যুট কতটা আরামদায়ক ও কার্যকার, তা পরীক্ষা করতে আসন্ন শরতে নিউইয়র্কে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।
ম্যাসন বলেন, প্রকৃত মহাকাশ অভিযানে ব্যবহারের আগে পৃথিবীতেই কৃত্রিম শূন্য অভিকর্ষ পরিবেশে এ স্যুটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যাবে।