ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ২০ জন সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত
ইরানে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির জন্য আনুষ্ঠানিক শোক শেষ না হতেই তার উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রায় ২০ জন প্রার্থীর নাম সামনে এসেছে।
যদিও প্রতিটি প্রার্থীকেই ১২ সদস্যের এলিট বডি গার্ডিয়ান কাউন্সিল থেকে ছাড়পত্র পেতে হবে। এই পদ্ধতিতে ইরানের রেজিম একদিকে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে চায় এবং একইসাথে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখাতে চায়।
গত সপ্তাহে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসির মৃত্যুতে আগামী ২১ জুলাই নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এটিকে কেন্দ্র করে শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি স্থিতিশীলতার স্বার্থে এমন পরিস্থিতি নিশ্চয়ই এড়াতে চাইবেন। যদিও এই নির্বাচনে ব্যক্তিত্ব, পেছন থেকে নিয়ন্ত্রণ, সর্বোচ্চ নেতার সাথে সম্পর্ক ও আদর্শ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এর আগে দুইবার প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাঈদ জলিলি। চার বছর আগে তিনি রাইসির পক্ষে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তবে গতকাল রবিবার তিনি জানান, এবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সাঈদ জলিলি একজন কট্টরপন্থী। তিনি তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তিনি ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে প্রধান মধ্যস্থতাকারী ছিলেন।
এদিকে সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ তার বাড়ির বাইরে সমর্থকদের মাঝে হাজির হয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। তবে সার্বিক বিবেচনায় তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা কম।
আর তেহরানের মেয়র আলিরেজা জাকানি জালিলির মতো দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বলেছেন, তিনি এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে সূত্র জানায়, তিনি নির্বাচনে ক্যাম্পেইনের জন্য একটি দল তৈরি করছেন।
এছাড়াও মোস্তাজাফান ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান পারভিজ ফাত্তাহও প্রার্থী হিসেবে নাম লেখাতে পারে। তিনি একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী। এছাড়াও ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফকেও প্রার্থী হিসাবে দেখা যেতে পারে।
প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার জন্য মাত্র চারদিনের সময় দেওয়া হয়; যা এই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে। যদিও ১০ জনের মতো প্রার্থীকে প্রথম রাউন্ডে লড়াইয়ের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। ২০২১ সালে এই সংখ্যা মাত্র চারজন ছিল।
আলি লারিজানি ১২ বছর ধরে সংসদের স্পিকার ও একজন অভিজ্ঞ মধ্যপন্থী রাজনৈতিক নেতা। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি-না কিংবা তাকে অনুমতি দেওয়া হবে কি-না সেটি নিয়ে এখনও সন্দেহ রয়েছে।
যদিও লারিজানি নিজে এমন খবর অস্বীকার করে বলেছেন, "যেকোনো সিদ্ধান্ত তার অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে জানানো হবে।" তবে এবার যদি তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমতি দেওয়া হয় তবে তবে বোঝা যাবে যে, দেশটির শাসকগোষ্ঠী সত্যিকারের ম্যান্ডেটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিরও তার প্রতি সমর্থন রয়েছে।
তবে কিছু ইরানি মিডিয়া ধারণা করছে যে, ব্যতিক্রমী কিছু না হলে ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মোখবারকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করা হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতা, সর্বোচ্চ নেতার বিষয়গুলি পরিচালনা করাসহ নানা কারণে তিনি একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে শাসকগোষ্ঠীর কাছে পরিচিত। যদিও দুর্নীতির নানা অভিযোগ এবং অকার্যকর কোভিড ভ্যাকসিনের জন্য সাধারণ ইরানিদের কাছে তিনি খুব একটা জনপ্রিয় নয়।
খামেনির আদেশ কার্যকর করার প্রধান দায়িত্বে থাকা পারভিজ ফাত্তাহও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। তিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকা একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান