নতুন বিপদে কেজরিওয়াল, নিজ দলের রাজ্যসভা সদস্যকে মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার তার সহকারী
এক সপ্তাহ আগেও রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গিয়েছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ)।
কিন্তু এক সপ্তাহ পেরোতেই বদলে গেছে পরিস্থিতি। আপ-এর রাজ্যসভা সদস্য স্বাতী মালিওয়ালকে মারধর ও হেনস্তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব বিভব কুমার। তাতেই রাজনীতির ময়দানে এবার বেকায়দায় পড়ে গেছে আম আদমি পার্টি।
আজ (১৮ মে) মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বিভবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়।
স্বাতী মালিওয়াল অভিযোগ করেন, গত সোমবার (১৩ মে) কেজরিওয়ালের বাসভবনে গেলে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব বিভব কুমার তাকে মারধর করেন। স্বাতী তার বিরুদ্ধে মামলা করার পরই দিল্লি বিভবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এফআইআরে স্বাতী অভিযোগ করেছেন, বিভব তার বুক, পেট ও তলপেটে লাথি মেরেছেন। আত্মরক্ষা করার জন্য বিভবকে লাথি মেরে সরিয়ে দিতে গেলে তিনি স্বাতীর শার্ট ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে টান মারেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে এফআইআরে।
আপের রাজ্যসভা সাংসদ স্বাতীর দাবি, গত সোমবার কেজরিওয়ালের বাসভবনে ক্যাম্প অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। বিভব কুমারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশ করেন তিনি। স্বাতী বসার ঘরে অপেক্ষা করার সময়ে তাকে জানানো হয়, কেজরিওয়াল আসছেন দেখা করতে। কিন্তু হঠাৎই কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব বিভব ঘরে ঢুকে স্বাতীকে দেখেন। ভেতরে ঢুকেই বিভব তাকে গালিগালাজ শুরু করেন। তিনি প্রতিবাদ জানালে সাত-আটটি চড় মারেন বিভব। তারপর তাকে মারধর করেন। মারধরের পর তাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্বাতীর।
তবে আপ দাবি করেছে, পুরো ব্যাপারটাই সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়াল অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পাওয়ার ঘটনায় পুরোপুরি নড়ে গেছে বিজেপি। সেজন্য স্বাতীকে ঘুঁটি সাজিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে আপ। সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে আপ দাবি করেছে যে কোনোরকমের হেনস্তা করা হয়নি স্বাতীকে।
স্বাতী কেন নিজে দলের প্রধানের সহকারীর বিরুদ্ধে 'চক্রান্ত' করেছেন, সে ব্যাখ্যা দিয়েছে আম আদমি পার্টি। শনিবার দিল্লির মন্ত্রী, আপের নেতা অতিশি দাবি করেছেন, দিল্লি মহিলা কমিশনের বেআইনিভাবে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়োগের অভিযোগে স্বাতীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। দাখিল করা হয়েছে চার্জশিট। আর সেই মামলাকে ব্যবহার করেই স্বাতীকে চক্রান্তে যুক্ত করেছে বিজেপি।
উল্লেখ্য, অর্থ পাচারের মামলায় কারাবন্দি কেজরিওয়ালকে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ১ জুন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার প্রচারণায় কেজরিওয়াল অভিযোগ করেন, বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদি মিথ্যা অভিযোগ ও মামলায় বিরোধীদলীয় নেতাদের কারাগারে ঢোকাচ্ছেন।
এখন নতুন এই বিতর্ক আপের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে স্বীকার করেছেন আপের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। যদিও এতে ভোটারদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি তাদের।
দিল্লিতে এতদিন আপের নির্বাচনী প্রচারণার মূল বক্তব্য ছিল কেজরিওয়ালের 'অন্যায়' গ্রেপ্তার। গত সপ্তাহে কেজরিওয়াল অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পাওয়ার পর দলটির প্রচারণা আর বেগবান হয়।