রাশিয়ার নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কে এই বেলুসভ?
টানা পঞ্চম মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। একযুগ ধরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানো সের্গেই শোইগুকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার জায়গায় অর্থনীতিবিদ ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভকে নিয়োগ দিয়েছেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে আসেন বেলুসভ।
পেশাগত জীবনে কখনোই সামরিক বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেননি বেলুসভ। তবে তিনি পুতিনের বেসামরিক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, রুশ প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তিনি দুই বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনায় একটি বড় পরিবর্তন চাইছেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, বেলুসভকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে পুতিন যে রাশিয়ার রেকর্ড ১০.৮ ট্রিলিয়ন রুবল (১১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রতিরক্ষা ব্যয়ের উপর আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ চইছেন, সেটিরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েক দশক ধরে পুতিন ও বেলুসভকে চেনেন এমন এক ব্যক্তি বলেন, 'তিনি (বেলুসভ) একেবারেই দুর্নীতিগ্রস্ত নন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে এখন আমাদের যা আছে তার থেকে আলাদা কিছু হতে চলেছে। শোইগু ও তার চারপাশের লোকেরা সত্যিই কমার্শিয়াল ছিলেন।'
তিনি বলেন, 'বেলুসভ…তিনি খুবই কর্মপরায়ন। তিনি একজন টেকনোক্র্যাট। তিনি খুব সৎ এবং পুতিন তাকে খুব ভালোভাবে চেনেন।'
৬৫ বছর বয়সী বেলুসভ ১৯৮১ সালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তার বাবা ছিলেন সোভিয়েত আমলের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
২০০০ সালে বেলুসভ রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নন-স্টাফ উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। এর ছয় বছর পর অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি সরকারের অর্থনীতি বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১২ সালে বেলুসভ অর্থমন্ত্রী হন। ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে তিনি প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। করোনা মহামারির সময় কিছুদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন বেলুসভ।
বেলুসভ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই ভূমিকার কারণে অন্য টেকনোক্র্যাটদের চেয়ে আলাদা পরিচিতি পান তিনি।
যৌবনে বেলুসভ কারাতেসহ বিভিন্ন খেলার অনুশীলন করতেন।
ক্রেমলিনের সাবেক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, 'তিনি (বেলুসভ) বোবা বা বাকশক্তিহীন নন। তার গাণিতিক মন রয়েছে। তবে তার মানসিকতা কিছুটা সোভিয়েত যুগের।'
ক্রেমলিনপন্থী বহু মানুষ, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের যুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকসহ অনেকেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দুর্নীতির কথা তুলে ধরে সোচ্চার হয়েছিলেন এবং সম্মুখযুদ্ধে রাশিয়ার ব্যর্থতার জন্য দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছিলেন। তারা বেলুসভের নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তারা আশা করছেন, বেলুসভ তার অর্থনীতি বিষয়ক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাবেন।
রাশিয়ার যুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিক ইউরি কোতেনক টেলিগ্রামে লিখেছেন, 'বেলুসভ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় আর্থিক হিসাব-নিকাশ খতিয়ে দেখবেন। তিনি এ বিষয়ে বেশ পারদর্শী। তিনি একজন শীর্ষ স্তরের অর্থনীতিবিদ এবং পরিসংখ্যানবিদ।'
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন যে, "উদ্ভাবনের" দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই একজন বেসামরিক ব্যক্তিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে দেওয়া হচ্ছে।
২০২২ সালে ইউক্রেনের কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রুশ বাহিনী পিছিয়ে যাওয়ার পর রাশিয়ার সামরিক ব্লগাররা শোইগুর তীব্র সমালোচনা করেছিল। রাশিয়া ভাড়াটে সামরিক বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন শোইগুর অন্যতম কঠোর সমালোচক ছিলেন। গত বছর শোইগুকে পদ থেকে সরানোর দাবিতে তিনি তার বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহী করে সশস্ত্র অবস্থায় মস্কোর পথে রওনা হয়েছিলেন, কিন্তু পরে বিদ্রোহ থেকে সরে এসেছিলেন।
এর কয়েক মাস পর প্রিগোজিন মস্কোর অদূরে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।
যুদ্ধক্ষেত্রে অপমানজনক ব্যর্থতার পরও শোইগু প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তবে সম্প্রতি প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির ঘটনায় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিমুর ইভানকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্নীতির ঘটনায় বেশ চাপের মধ্যে পড়েন শোইগু।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক