বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি ভারতে বেকারত্বই সবচেয়ে বড় সমস্যা: রয়টার্স জরিপ
চলমান নির্বাচনের পরে ভারত সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হবে বেকারত্ব। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটির অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এক জরিপ পরিচালনা করেছে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা এ মতপ্রকাশ করেছেন। চলতি অর্থবছর শেষে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের মতো হবে বলেও আশা করছেন তাঁরা।
প্রবৃদ্ধির ধারা ভালোর দিকে থাকলেও– ভারতীয় অর্থনীতিতে বিপুল ও ক্রমবর্ধমাণ তরুণ জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। দেশটির জনগণ যখন লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সরকার নির্বাচিত করছে– তার মধ্যে এটিকেই প্রধান সমস্যা বলে মনে করছেন তাঁরা।
দেশটির মোট ২৬ জন অর্থনীতিবিদ রয়টার্সের জরিপে অংশ নেন। এদের অধিকাংশ বা ১৫ জনই মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের পরে বেকারত্ব সমস্যাই হবে সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
৮ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, গ্রামীণ ভোগ চাহিদাকে চাঙ্গা করাই হবে সবচেয়ে বড় সমস্যা, আর অন্য দুজন বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্যের কথা।
সোসাইটি জেনারেল সংস্থার ভারতীয় অর্থনীতিবিদ কুনাল কুন্ডু বলেন, "প্রায় এক দশক ধরে কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভারতীয় অর্থনীতিতে জনশক্তির অংশগ্রহণের হার (এলএফপিআর) ইতঃপূর্বে জনমিতির এই পর্যায়ে থাকা চারটি এশিয়ার টাইগারখ্যাত অর্থনীতির যে হারে ছিল– তার চেয়ে অনেক নিচে নেমেছে।"
তিনি বলেন, "(কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল) ভারতীয় জনতা পার্টি কর্মসংস্থানের বিদ্যমান চালিকাশক্তি (অবকাঠামো, উৎপাদন ও সরকারি চাকরি)-র দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর বাইরে যে তারা এখনও কোনোরকম দৃষ্টি দিচ্ছে না, সেটাই সবচেয়ে উদ্বেগের কথা। আরো দৃঢ় পরিকল্পনা ছাড়া, জনমিতিক লভ্যাংশের সম্ভাব্য সুবিধাগুলো হারানোর ঝুঁকিতে আছে ভারত।"
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি এবারেও নির্বাচিত হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফিরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে মোদি বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটির বেকারত্বের হার ইঙ্গিত দিচ্ছে, পার্থক্য গড়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেনি তাঁর সরকারের প্রচেষ্টাগুলো।
বিভিন্ন সময়ের জনশক্তি জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৩-১৪ সালে বেকারত্ব হার ছিল ৩.৪ শতাংশ, যেটা ২০২২-২৩ সালে সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৩.২ শতাংশে।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক– সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির তথ্যমতে, মার্চে দেশটিতে বেকারত্বের হার ছিল ৭.৬ শতাংশ।
এদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যখন উন্নতি নেই, তারমধ্যেই সরকার প্রধান প্রধান সব বিনিয়োগ করছে, যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুতগতির হয়েছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৪ শতাংশ, যা প্রত্যাশার চেয়েও অনেকটাই বেশি।
গত প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ৬.৫ শতাংশ হারে বেড়েছে এবং ৩১ মার্চে শেষ হওয়া বিগত অর্থবছরে ৭.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলেও ধারণা করছেন রয়টার্সের জরিপে অংশগ্রহণকারী অর্থনীতিবিদরা।
অনুবাদ: নূর মাজিদ