ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আরও কাছাকাছি আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পথে আরও এগিয়ে গেছে আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে বৈঠকের পরে পৃথকভাবে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশ দুটির নেতারা। স্পেনের প্রধানমন্ত্রীও এই পদক্ষেপের সমর্থক।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ডাবলিনে সানচেজের সঙ্গে বৈঠকের পর আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস বলেন, আয়ারল্যান্ড শীঘ্রই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চায়। তবে তারা সেটি করতে চায় স্পেনসহ আরও ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে।
এর আগে ওই দিনই অসলো সফর করেন সানচেজ। সেখানে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইয়ো গার স্টোর বলেন, তার দেশও 'সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে' মিলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে 'প্রস্তুত' রয়েছে।
সানচেজ বলেন, স্পেন 'যত দ্রুত সম্ভব' ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চায়।
গাজায় ইসরায়েলের চলমান আক্রমণে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু, অনাহার ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের সমালোচনা হওয়ায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পক্ষে বর্তমানের এসব প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
ইউরোপের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে উদ্বেগ থেকে অনেক দেশ অবস্থান বদলেছে। আগের চেয়ে আরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে।
স্পেনা ও আয়ারল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছে। গত মাসে দেশ দুটি ঘোষণা দেয়, মাল্টা ও স্লোভেনিয়ায় পাশাপাশি তারাও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য একসঙ্গে কাজ করবে। দেশগুলো বলেছে, তারা 'ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত'; 'উপযুক্ত পরিস্থিতি হলেই' তারা স্বীকৃতি দেবে।
শুক্রবার সানচেজের সঙ্গে বৈঠকের পর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হ্যারিস বলেন, '…এ ব্যাপারে আমাদের আরও অগ্রগতি হয়েছে। আমরা একসঙ্গে কাজটি করতে চাই।'
তিনি বলেন, যথোপযুক্ত সময় এলে আগ্রহী দেশগুলো তাদের ঘোষণা দেবে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার পক্ষে তারা সমর্থন জানাবে।
তিনি বলেন, 'ফিলিস্তিনের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নিজ দেশ ও সার্বভৌমত্বের মর্যাদা চেয়ে আসছে।'
সানচেজ বলেন, ইচ্ছুক দেশগুলো 'উপযুক্ত পরিস্থিতি হলেই' ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেবে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে 'জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য' হওয়ার জন্য সমর্থন দেবে।
গাজায় আক্রমণ শুরুর পর থেকেই বারবার ইসরায়েলের প্রতি কড়া ভাষায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী স্টোর শুক্রবার সানচেজের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত রয়েছে নরওয়ে।'
তারা নির্দিষ্ট কোনো টাইমটেবিল ঠিক করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির জন্য 'সমমনা দেশগুলোকে' নিবিড়ভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত নভেম্বরে নরওয়ের পার্লামেন্ট স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সরকারের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে।
১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনারও আয়োজন করেছিল নরওয়ে। সেই আলোচনার পথ ধরে স্বাক্ষর হয়েছিল অসলো চুক্তি।
ইসরায়েলের আক্রমণে গাজার ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৬ হাজারের বেশি মানুষ।
উল্লেখ্য, বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৩৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।