ইসরায়েলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অত্যাসন্ন, প্রতিরক্ষায় দৃঢ় সমর্থনের অঙ্গীকার বাইডেনের
ইসরায়েলের সরকারি বিভিন্ন ভবন ও সামরিক স্থাপনায় ইরান ও তার প্রক্সি বাহিনীগুলো অচিরেই বড় ধরনের হামলা চালাবে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এই হামলা চালানো হতে পারে। এর মধ্যে দিয়ে গাজাকে কেন্দ্র করে চলমান যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে অবহিত সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
কর্মকর্তারা জানান, সম্ভাব্য এই আক্রমণে লক্ষ্যবস্তুতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হাই-প্রিসিশান মিসাইল ব্যবহার করা হতে পারে। আগামী দিনকয়েকের মধ্যেই এমনটা ঘটতে পারে। হামলা যে হবেই – এনিয়ে তাঁদের কোনো সন্দেহ নেই, তবে কখন হবে সেটি এখনো জানা যায়নি।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের গোয়েন্দা তথ্যের বিশ্লেষণ দেখেই তাঁরা এমন মন্তব্য করেছেন।
সিরিয়ার ইরানি দূতাবাসে হামলা চালিয়ে এক সপ্তাহ আগে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সিনিয়র কয়েকজন কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরায়েল। এই ঘটনার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েলকে এবার ভয়ঙ্কর জবাব দেওয়া হবে।
এর আগে বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দামাস্কাসের দূতাবাসে ওই হামলা সরাসরি ইরানের ভূখণ্ডে হামলার শামিল।
ইসরায়েল দূতাবাসে হামলার ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও–সিরিয়া, লেবানন ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে এমন অস্পষ্টতা বজায় রাখে। গোপন হামলার ক্ষেত্রে এটি তেল আবিবের দীর্ঘদিনের নীতি।
এই অবস্থায় পশ্চিমা মিত্ররা তেল আবিবকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সরকারি ও সামরিক স্থাপনাগুলো ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, তবে বেসামরিক স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা তারা করছে না।
ওই কর্মকর্তারা ব্লুমবার্গকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা ইসরায়েলকে গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও সে অনুযায়ী প্রতিরক্ষার পরিকল্পনা করতে সহায়তা করছে। ইসরায়েল তার মিত্রদের জানিয়েছে, এই হামলার কথা মাথায় রেখেই তারা গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে। হামলার পর গাজার রাফাহ শহরে স্থল অভিযান চালাবে ইসরায়েলি সেনারা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষণের সাথে একমত। তারাও অচিরেই হামলার আশঙ্কা করছেন। তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলে হামলা হলে, জায়নবাদী রাষ্ট্র ইরানেও পাল্টা-হামলা চালাবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইরানি হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তারা জরুরী অবস্থার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সর্বাত্মক একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে– ইসরায়েল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি জেনারেটর ও স্যাটেলাইট ফোনের মতো সরঞ্জামের জন্য তাঁরা তেল আবিবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। তবে পশ্চিমা কোনো দেশের কূটনৈতিক মিশন ইসরায়েল ছাড়ার পরিকল্পনা করছে না বলেই জানান ওই কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলকে রক্ষায় বাইডেনের দৃঢ় অঙ্গীকার
এদিকে ইসরায়েলকে রক্ষায় 'ইস্পাতদৃঢ়' সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সম্পর্কে করা তাঁর সমালোচনা প্রকাশ্যে আসা সত্ত্বেও বাইডেন এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেছেন, "ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। কিন্তু, ইরান বা তার প্রক্সি বাহিনীগুলোর যেকোনো হুমকি থেকে ইসরায়েলকে নিরাপদ রাখতে আমাদের যে ইস্পাতদৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে– সেটি আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছি।"
"আমি আবারও বলছি, এটি ইস্পাতদৃঢ় (প্রতিশ্রুতি)। ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য আমরা যা যা করা যায়, তার সবই করব"- যোগ করেন তিনি।
অনুবাদ: নূর মাজিদ