আপনার শেফ কি হাত ধুয়েছিলেন? জানাবে হ্যান্ডওয়াশিং ‘লাই ডিটেক্টরস’
আমেরিকানরা বাইরে খেতে বেশ পছন্দ করেন। তাই যতবারই তারা বাইরের খাবার খাচ্ছেন, বলা চলে ততবারই তারা নিজেদের সুস্থ থাকার ব্যাপারটা ওই খাবার প্রস্তুতকারীদের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন।
এমনটা কেন? এর কারণ হলো খারাপ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা। বিশেষ করে খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের যথাযথভাবে হাত না ধোয়া বড় একটি সমস্যা।
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, খাদ্য প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের প্রতি তিনজনের মধ্যে মাত্র একজন যথাযথভাবে তাদের হাত ধুয়ে থাকেন। ফলস্বরূপ যারা ভালোভাবে হাত না ধোয়, তাদের হাত থেকে জীবাণু খাবারে প্রবেশ করে। আর এ থেকে রেস্টুরেন্টগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে খাদ্যজনিত মারাত্মক সব অসুখ।
হাত ধোয়ার অভ্যাস বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা নরোভাইরাস, সালমোনেলার মতো রোগগুলো ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড ইনভেন্টর ক্রিস্টিন শিন্ডলার গত সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ নিয়ে কাজ করছেন। কর্মীদের হাত ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত হয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত করতে তিনিসহ কয়েকজন মিলে একটি ডিভাইস তৈরি করেছেন। তারা এটির নাম দিয়েছেন 'পাথস্পট'। শিন্ডলার পাথস্পটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও।
ডিভাইসটিকে হ্যান্ডস্ক্যানারও বলা হয়। হাতে জীবাণু থাকলে শনাক্ত করতে পারে ডিভাইসটি।
শিন্ডলার ডিভাইসটির বিষয়ে বলেন, এটি একটি হ্যান্ডওয়াশিং 'লাই ডিটেক্টর'। বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের মতো খাদ্য পরিষেবা ডিভাইসটির ব্যবহার শুরু করেছে।
ডিভাইসটির ওজন পাঁচ পাউন্ডেরও কম। আকারেও বেশ ছোট।
ডিভাইসটি ব্যবহারের জন্য প্রথমে সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে ধুয়ে নিতে হয়। তারপর হাত ভালোভাবে মুছে ডিভাইসটির নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হয়। ওই হাতে খাদ্যজনিত রোগ ছড়ায় এমন জীবাণু থাকলে, মাত্র দুই সেকেন্ডেই সেটি ধরে ফেলে ডিভাইসটি।
ফলে ওই ব্যক্তি আবারও ভালোভাবে নিজের হাত ধুয়ে নিতে পারেন।
দ্বিতীয়বার কেউ হাত পরিষ্কার করতে না চাইলেও সেটির সুযোগ নেই।
শিন্ডলার জানান, যদি কোনো ব্যক্তি জীবাণু থাকার পরও দ্বিতীয়বার হাত না ধোয়, তাহলে তারা ওই রেস্টুরেন্ট সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়ে দিতে পারেন।
ডিভাইসটির কতটুকু কাজে আসছে সে বিষয়ে শিন্ডলার বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, স্ক্যানের পর হাতে জীবাণু থাকলে কেউ কেউ তিন থেকে পাঁচবার পর্যন্ত হাত ধুয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিচ্ছেন। আবার ১০ জনের মধ্যে ৯ জন কর্মীই অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ভালোভাবে তাদের হাত পরিষ্কার করে নেন। এর কারণ হিসেবে তারা জানান যে, বাড়ি তথা পরিবারের কাছে ফেরার সময় তারা তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান।
অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোফেশনালস ইন ইনফেকশন কন্ট্রোল অ্যান্ড এপিমিওলজির গবেষণা পরিচালক বার্টেলস জানান, যেকোনো অবস্থায়ই রোগের বিস্তার ঠেকাতে ভালোভাবে ও ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি হাতের সুস্থতার কাজটি সহজ করে দিতে পারে।
এদিকে অনেকেই মনে করেন, গ্লোভস ব্যবহার করলে রোগ-জীবাণু ছড়ায় না। ধারণাটি ভুল বলে জানান শিন্ডলার।
তিনি জানান, গ্লোভস ব্যবহার করা কখনোই হাত ধোয়ার বিকল্প হতে পারে না। বরং খালি হাতের চেয়ে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক।
পরিচ্ছন্নতার আধুনিকীকরণে প্রযুক্তির মোড়
কয়েক বছর আগে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কম খরচে চিকিৎসা সরঞ্জামের সুবিধা নিশ্চিত করা নিয়ে কাজ করছিলেন শিন্ডলার।
এ সময় খাদ্যজনিত অসুস্থতার বিষয়টি তার নজরে আসে।
তিনি বলেন, অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলেন, অনেকে মারাও যাচ্ছিলেন।
একপর্যায়ে তারা জানতে পারলেন- যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরই অসুস্থতার কারণ ভালোভাবে হাত না ধোয়া।
তখনই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন শিন্ডলার।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক