মালদ্বীপের ক্ষুদ্র আয়তন আমাদের ভয় দেখানোর লাইসেন্স নয়: প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু
প্রতিবেশি ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু বলেছেন, তার দেশ আয়তনে ছোট হওয়ার অর্থ এই নয় যে এটি কাউকে তার দেশকে ভয় দেখানো বা পীড়নের জন্য বলপ্রয়োগের লাইসেন্স দেয়। তিনি বলেছেন, 'মালদ্বীপ কোনো দেশের পেছনে নেই। আর ভারত মহাসাগরও এককভাবে কোনো দেশের নয়।'
ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন সফর শেষে মুইজ্জু শনিবার (১৩ জানুয়ারি) গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন। তার এ মন্তব্যকে ভারত ও মালদ্বীপ সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনেরই একটি চিহ্ন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই গত মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) পাঁচ দিনের সফরে চীন যান মুইজ্জু।
মুইজ্জু বলেন, 'আমরা আয়তনে ছোট হতে পারি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় এটি আপনাকে আমাদের দুর্বল ভেবে ভয় দেখানো কিংবা পীড়ন করার জন্য বলপ্রয়োগের লাইসেন্স দেয় না।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক লাক্ষাদ্বীপ সফরকে কেন্দ্র করে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়। সফরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে মোদি লেখেন, মালদ্বীপের মতোই সুন্দর দ্বীপটি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মালদ্বীপের মন্ত্রীরা। তারা এক্সে (সাবেক টুইটার) মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর কয়েকটি পোস্টও করেন। এ ঘটনায় মালদ্বীপের তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে মালদ্বীপ সরকার।
মালদ্বীপ সরকার জানায়, মন্ত্রীদের এসব মন্তব্য সরকারের নিজস্ব অবস্থানের প্রতিফলন নয়।
ভারতের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে মালদ্বীপ সরকারের প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দিয়ে মুইজ্জু বলেন, 'আমরা মুক্ত ও স্বাধীন জাতি। এই আঞ্চলিক অখণ্ডতা এমন কিছু যা চীন দৃঢ়ভাবে সম্মান করে।'
নয়াদিল্লি ও মালের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও তাতে ফাটল ধরার ইঙ্গিত স্পষ্ট। মুইজ্জু মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সে থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মালদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি মুইজ্জুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল। মুইজ্জু তার পূর্বসূরিকে জাতীয় সার্বভৌমত্বের সাথে আপস করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
এসব ঘটনায় অনেক ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতের সাথে এই বিরোধ মালদ্বীপকে বিভিন্ন দিক থেকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মালদ্বীপের বহু নাগরিকের ভারতে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। এছাড়াও ওষুধসহ আরো প্রয়োজনীয় জিনিস মালদ্বীপ ভারত থেকে আমদানি করে থাকে।
এদিকে পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে মালদ্বীপের। প্রতিবছর দেশটিতে বহু পর্যটকের আনাগোনা হয়ে থাকে। গত বছর মালদ্বীপে সবচেয়ে বেশি ১১ শতাংশ পর্যটক এসেছে ভারত থেকে।
মুইজ্জু জানান, করোনা মহামারির আগে চীন থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক মালদ্বীপে এসেছে। এই সংখ্যা দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মুইজ্জু এমন কিছু পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন যেগুলো বাস্তবায়িত হলে মালদ্বীপ ভারত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ভারত ও শ্রীলঙ্কার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য মালদ্বীপ সরকার তার নাগরিকদের যে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে, সেসব সুযোগ-সুবিধা থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাসপাতালগুলোতেও নিশ্চিত করা হবে।
মুইজ্জু জানান, চাল, চিনি ও আটা আমদানির জন্য তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ওষুধ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদকদের কাছ থেকে সরাসরি আমদানি করা হবে।
শেষে তিনি বলেন, 'আমরা অবশ্যই আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করব এবং মালদ্বীপবাসীদের জন্য মালদ্বীপ প্রতিষ্ঠা করব।'