হামাসের আকস্মিক হামলায় হতভম্ব ইসরায়েল, সামনে কি হতে চলেছে?
১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয় ইসরায়েলে মিশর ও সিরিয়ার আকস্মিক হামলার মধ্য দিয়ে। ঠিক ৫০ বছর পর এসে আরেকটি ইহুদি দিবসে একইভাবে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলা হতভম্ব করেছে ইসরায়েলিদের।
সাম্প্রতিক সময়ে গাজা উপত্যকায় উত্তেজনা বাড়ছিল। তবে প্রচলিত ধারণা ছিল, সেখানে ক্ষমতায় থাকা হামাস কিংবা পূর্ব-দখলদার ইসরায়েল; কেউই যুদ্ধ চায় না।
তবে হামাস গোপনে পরিকল্পনা করে গেছে সমন্বিত হামলার। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চালায় দলটি। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা সড়ক, আকাশ ও নৌ পথে দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে। খবর বিবিসির
ইসরায়েলের কয়েকটি শহর ও আর্মি ফাঁড়ি কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। অনেককে হত্যা করে এবং অজ্ঞাত সংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। অনেক গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে এসব ঘটনার ভিডিও প্রচারিত হয়েছে।
গাজা সীমান্তে বসবাসকারী হাজারো ইসরায়েলি-যারা রাতে পার্টি করতে বের হয়েছিলেন-মুহূর্তের মধ্যে নিজেদের গোলাগুলির মধ্যে আবিষ্কার করেন।
তেমনই এক প্রত্যক্ষদর্শী গিলি ইয়স্কভিচ। এই নারীকে তার স্বামী গাড়ি নিয়ে এসে উদ্ধার করেন। তার আগের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বিবিসিকে বলেন, তারা (হামাস সদস্য) এক গাছ থেকে আরেক গাছে আড়াল নিচ্ছিল। এভাবে এগিয়ে যেতে যেতে সব জায়গায় গুলি চালাতে থাকে। দুই দিক থেকে তারা এগিয়ে আসছিল। আমি দেখছিলাম চারপাশের মানুষ মরছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী কেন দেরিতে পৌঁছেছে, এই বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন অনেক ইসরায়েলি। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামাস সদস্যরা ইসরায়েলের আর্মি ফাঁড়িতে ট্যাংক দখল করছে।
ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান নিয়ে আসার পর গাজায় উৎসব করতেও দেখা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদি দর্শনার্থী বাড়ার প্রসঙ্গ টেনে এক তরুণ ফিলিস্তিনি বলেন, হামাসের এই হামলা নিয়ে আমি আনন্দিত। এটি আল-আকসায় ইসরায়েলি কার্যক্রমের প্রতিশোধ।
ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা। এটি ইহুদিদের জন্যও পবিত্র, যা তাদের কাছে 'টেম্পল মাউন্ট' নামে পরিচিত।
অনেক ফিলিস্তিনি আবার হামাসের হামলার পরিণতি নিয়ে ভয়ের কথা উল্লেখ করেন। শনিবারই ইসরায়েল পাল্টা হামলা শুরু করে এবং ফিলিস্তিন হাসপাতালগুলো এখন হতাহত দিয়ে ভর্তি।
পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ের একবছর পর ২০০৭ সালে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। ২০২১ সালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের পর মিশর, কাতার এবং জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় শান্তি বজায় রাখার শর্তে অনেক গাজাবাসীকে ইসরায়েলে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
গত মাসে, পাঁচ বছর আগের গণ-বিক্ষোভের স্মরণে সীমান্ত বেড়ায় শত শত ফিলিস্তিনি যখন আবারো বিক্ষোভ করতে শুরু করেন, তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল এতে হামাসের সমর্থন আছে। কাতার এবং ইসরায়েল থেকে আরো অর্থ সহায়তা পেতেই হয়তো এমনটা করা হচ্ছে।
তবে এখন অনেকে অনুমান করছেন, ইসরায়েলে হামলার আগে সীমান্তের পরিস্থিতি বুঝে নিতেই হয়তো এই বিক্ষোভ হয়েছে।
হামাস এই হামলাকে দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে ঘোষণা দিয়েছে। হামলার শুরুর দিকে হামাসের কমান্ডার মোহাম্মদ দাঈফ ফিলিস্তিনি এবং অন্যান্য আরবদের 'দখলদারদের হঠাতে' নেওয়া উদ্যোগে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এখন বড় প্রশ্ন হলো, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম কিংবা এই অঞ্চলের অন্যান্য ফিলিস্তিনিরা এই আহ্বানে সাড়া দেবেন কি না।
নিঃসন্দেহে ইসরায়েল কয়েকদিক থেকে হামলার আশঙ্কায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি লেবানিজ গোষ্ঠী হেজবুল্লাহও হামাসের সঙ্গে হামলায় যোগ দেওয়ার শঙ্কাও আছে।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী নিজেদের সংঘবদ্ধ করছে এবং গাজায় যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।
তবে 'মানব ঢাল এবং সমঝোতার হাতিয়ার' হিসেবে ব্যবহারের জন্য যাদের জিম্মি করা হয়েছে তাদের বিষয়টি পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র দানিয়েল হ্যাগারি বলেছে, আমরা বর্তমানে এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারের ব্যস্ত এবং বিশেষ করে গাজা উপত্যকায় ব্যাপকভাবে হামলা চালাচ্ছি। হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করব।
সে পর্যালোচনায় হয়তো আরো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে ইসরায়েলের গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি নিজেদের প্রশ্ন করবে যে, হামলার পূর্বাভাস পেতে কেন তারা ব্যর্থ হলো।