বুরেভেস্টনিক: রাশিয়ার পরীক্ষা করা সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্রটি কতটা শক্তিশালী?
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বলেছেন, রাশিয়া সফলভাবে তাদের নতুন বুরেভেস্টনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে।
বুরেভেস্টনিক কি এবং কেন আলাদা?
বুরেভেস্টনিক শব্দের অর্থ করলে দাঁড়ায় 'পেট্রেল ঝড়'। পেট্রেল মূলত একটি পাখি। সমুদ্রঝড়ের মধ্যে পাখিটি পানিতে অবতরণ করতে পারে না। ঝড় থামা পর্যন্ত সেটি উড়তে থাকে।
এটি ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করা, কম উচ্চতায় ওড়া ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে তো সক্ষমই, পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক জ্বালানি সম্পন্নও। ২০১৮ সালের মার্চে পুতিন প্রথমবার এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন।
ক্ষেপণাস্ত্রটির পারমাণবিক জ্বালানি এটিকে প্রচলিত টার্বোজেট বা টার্বোফ্যান ইঞ্জিনের তুলনায় -যেগুলোর জ্বালানি ধারণক্ষমতা কম- বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম করে তোলে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ একটি রুশ সামরিক জার্নালের বরাতে জানায়, বুরেভেস্টনিক প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। অর্থাৎ রাশিয়ার যে কোনো জায়গায় সেটিকে বসিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা যাবে।
একই জার্নালে বলা হয়, প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র থেকে অনেক কম উচ্চতায়- ১৬৪ থেকে ৩২৮ ফুট- বুরেভেস্টনিক উড়ে। ফলে এটিকে শনাক্ত করা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডারের জন্য কষ্টকর হবে।
যুুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর ২০২০ সালের এক প্রতিবেদন মতে, বুরেভেস্টনিক প্রকল্প সফল হলে রাশিয়া একটি অনন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্ষেপণাস্ত্র পাবে।
পারমাণবিক জ্বালানি সমৃদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। অনেকগুলো পরীক্ষা ইতোমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৯ সালে বিস্ফোরণে পাঁচ রুশ পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমাত, বুরেভেস্টনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে গিয়েই এই বিস্ফোরণ ঘটে।
পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বুরেভেস্টনিক আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। অলাভজনক নিরাপত্তা সংস্থা দ্য নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনেশিয়েটিভ ২০১৯ সালে অনুমান করে, বুরেভেস্টনিক মোতায়েনে হয়তো এক দশক লেগে যাবে।
বুরেভেস্টনিক ও রাশিয়ার অন্যান্য পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে কতটি পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করা যাবে সে সমঝোতাকে জটিল করে তুলতে পারে।
পুতিন উল্লেখ করেননি সর্বশেষ পরীক্ষা কবে করা হয়েছে। তবে আর্কটিকে একটি রুশ ঘাঁটিতে বিমান ও যানবাহন চলাচলের উপর ভিত্তি করে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়েই এই পরীক্ষা হয়েছে।