আমেরিকার আরো এক ব্যাংকের পতন, ফার্স্ট রিপাবলিক যেভাবে ব্যর্থ হলো
ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পর, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার আজ সোমবার (১ মে) বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকিং খাতের জায়ান্ট জেপি মরগ্যান চেজ- এর কাছে। খবর দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের।
সম্পদমূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যর্থ হওয়া ব্যাংক হলো ফার্স্ট রিপাবলিক।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আমানত সুরক্ষাকারী সংস্থা - ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন এক বিবৃতিতে জানায়, ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের লোকসান পূরণ করতে তাদের বিমা তহবিল থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ব্যাংকের সকল আমানত ও সম্পদের অধিকার তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণাও দেয়।
ফেডারেল সংস্থার হস্তক্ষেপ এবং জেপি মরগ্যানের কাছে বিক্রির মধ্যে দিয়ে, টানা ছয় সপ্তাহ ধরে ব্যাংকটি যে পতনের মধ্যে ছিল- তার অবসান হলো। রক্ষা পেল আমানতকারীদের অর্থ।
গত মার্চে দেউলিয়াত্বের ঝুঁকিতে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক। সম্পদ বাজেয়াপ্তের পর এ দুটি ব্যাংককেও বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয় মার্কিন সরকার। তখন থেকেই সবচেয়ে বেশি পতনের ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংক হিসেবে ফার্স্ট রিপাবলিককে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কারণ গত প্রান্তিকে ব্যাংকটি ১০২ বিলিয়ন ডলার আমানত হারিয়েছে। আগের বছরের শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭৬ বিলিয়ন ডলার।
এসময়ে সরকার সমর্থিত ঋণদাতা গোষ্ঠী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে প্রায় ৯২ বিলিয়ন ডলার ঋণও নেয় ব্যাংকটি।
আমানতকারীরা ঘাবড়ে গিয়ে অর্থ তুলে নেওয়ায় এবং বিনিয়োগকারীদের দলে দলে শেয়ার বিক্রি – যে দুটি কারণে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংকের পতন দ্রুত হয় – তার সাথে যোগসূত্র আছে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের ঘটনার।
ব্যাংকটি বাজেয়াপ্ত কেন করা হয়?
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক পতনের পর আমেরিকায় আশঙ্কা করা হচ্ছিল, আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে থাকা একের পর এক ব্যাংক পতনের মুখে পড়বে। এই অবস্থায়, এসব ব্যাংককে তহবিল সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়। আর্থিক টানাপোড়েন কাটাতে বেসরকারি খাতের সাহায্য পেয়েছিল ফার্স্ট রিপাবলিক। গত মার্চে জেপি মরগ্যান, মরগ্যান স্ট্যানলি ও ওয়েলস ফার্গো-সহ আমেরিকার বৃহত্তর ১১টি ব্যাংক থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার আমানত পায় ফার্স্ট রিপাবলিক।
কিন্তু, সংকট এতোটা গভীর ছিল যে, তারপরও হিমশিম খেয়েছে ব্যাংকটি। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য আরো অবনতির দিকে যাচ্ছিল। এসময়ে, ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে আমানতকারীরা বিপুল অর্থ তুলে নিয়ে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তারা নিরাপদ মনে করেন সেখানে রাখতে শুরু করেন।
এই ঘটনার প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। ধস নামে ফার্স্ট রিপাবলিকের শেয়ারমূল্যে। আশু পতনের শঙ্কা থেকে বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করেন। ফলে মাত্র এক সপ্তাহেই শেয়ারের দাম কমে যায় ৭৫ শতাংশ।
এর আগে প্রকাশিত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনও শেয়ার দর কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেদনে ফার্স্ট রিপাবলিক ফেডারেল রিজার্ভ এবং সরকার সমর্থিত ঋণদাতাদের থেকে বিপুল ঋণ নেওয়ার কথা স্বীকার করে।
এই বাস্তবতায়, ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন (এফডিআইসি) সিদ্ধান্ত নেয় যে, ব্যাংকটির আর নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা নেই।
২০০৮ সালে ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংকের পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহৎ হলো ফার্স্ট রিপাবলিকের ব্যর্থতার ঘটনা। তবে এরপর সরকারিভাবে নেওয়া পদক্ষেপের ক্ষেত্রে ছিল পূর্বে অনুসৃত নীতিরই প্রতিফলন। ফলে আজ সোমবার থেকেই ব্যাংকটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম আগের মতোন সচল রাখা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তুলান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আমান্ডা হেইজ।