‘রাষ্ট্রপত্নী’ মন্তব্যে উত্তাল ভারতের রাজনীতি
সদ্য নির্বাচিত ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উদ্দেশ্যে বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মন্তব্য ঘিরে উত্তাল ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল এক ভিডিওতে দেখা যায় রাষ্ট্রপতি মুর্মু্কে 'রাষ্ট্রপত্নী' বলে সম্বোধন করেন কংগ্রেসের এই সংসদ সদস্য।
দেশের সাংবিধানিক প্রধানকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্যে ভারতের লোকসভা অধিবেশনে তোলপাড় শুরু হয় আজ। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের বাদানুবাদে লোকসভা বিকাল ৪টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজেপি ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বেশ সরব। অধীর রঞ্জন চৌধুরীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা আহ্বানের পাশাপাশি কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকেও এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছে বিজেপি।
অধীর রঞ্জন চৌধুরীর এই মন্তব্য নিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে ভারতের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, 'দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে থাকা একজন নারীকে অপমান করার অনুমোদন দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী'। একইসঙ্গে তাকে আদিবাসী-বিরোধী, দলিত-বিরোধী ও নারী-বিরোধী বলেও আখ্যা দেন কেন্দ্রীয় এই মন্ত্রী।
এদিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও সংসদ চত্বরে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তিনি বলেন ইচ্ছাকৃতভাবেই লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মন্তব্য করেছেন অধীর রঞ্জন। এরজন্য কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীরও দলের তরফ থেকে রাষ্ট্রপতি ও দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সীতারারমন বলেন, "আমি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা দাবি করছি যিনি নিজে একজন নারী হয়েও তার দলের নেতাকে এসব বলার অনুমোদন দিয়ে রেখেছেন। সোনিয়া গান্ধীর জাতির সম্মুখে এসে রাষ্ট্রপতিকে অপমান করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত'।
তবে অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন তিনি মুখ ফসকে 'রাষ্ট্রপত্নী' বলে ফেলেছেন। বিজেপি তিলকে তাল বানাচ্ছে বলেও মন্তব্য তার। তিনি দাবি করেন বিজেপি মূল্যস্ফীতি, জিএসটি, অগ্নিপথ স্কিম, বেকারত্ব ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে মনোযোগ সরাতেই এসব করছে।
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক ভিডিও বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'ভারতের রাষ্ট্রপতি যেই হোক, ব্রাহ্মণ কিংবা আদিবাসী, রাষ্ট্রপতি আমাদের জন্য তিনি রাষ্ট্রপতিই। আমাদের কাছে পদটি অত্যন্ত সম্মানজনক। গতকাল বিজয় চকে বিক্ষোভ করার সময় সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন আমরা কী চাই। তখন মুখ ফসকে রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে 'রাষ্ট্রপত্নী'র বাড়ি যাওয়ার কথা বলে ফেলি। রিপোর্টার আমাকে সেটা ধরিয়ে দিলে তখনই ভুলবশত বলে ফেলার কথা স্বীকার করি। এটা তারা প্রচার না করলেই ভালো হতো। বিজেপি এখন এই সামান্য বিষয় নিয়ে হাঙ্গামা করছে। আমি ভুল করেছি, তবে একবারই, একটি মাত্র শব্দ'।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে আরও বলা হয়েছে যে অধীর দাবি করেন, 'রাষ্ট্রপতিকে অপমান করার বিষয়টি ভাবতেও পারি না। ওটা নেহায়েত একটি ভুল ছিল। যদি রাষ্ট্রপতির খারাপ লাগে, আমি তার সঙ্গে দেখা করব এবং ক্ষমা চাইব। ওরা যদি চায়, তাহলে আমায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতে পারি। আমি শাস্তি পেতে তৈরি। কিন্তু কেন তাকে (সোনিয়া) এখানে টেনে আনা হচ্ছে?'
এদিকে এনডিটিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সোনিয়া গান্ধী জানান অধীর রঞ্জন চৌধুরী ইতোমধ্যেই ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
অধীর চৌধুরী লোকসভার কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেস আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে গণমাধ্যমের সামনে তিনি বিতর্কিত এই মন্তব্য করেন।
স্মৃতি ইরানির দাবি বিজেপি সমর্থিত এনডিএ দ্রৌপদী মুর্মুর নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই তাকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে কংগ্রেস। দ্রৌপদীকে 'পাপেট' এমনকি 'অশুভ' বলেও মন্তব্য করেছেন দলটির নেতারা।
'কংগ্রেস নেতা জানতেন যে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ডাকা শুধু তার সাংবিধানিক পদকেই অপমান করে না একইসঙ্গে তিনি যে সমৃদ্ধ আদিবাসী ঐতিহ্য ধারণ করেন তাকেও খাটো করে,' বলেন এই নেত্রী।
- সূত্র: এনডিটিভি