জ্বালানি পরিকল্পনা নিয়ে ব্লকের ভেতরেই বিরোধিতার মুখে ইইউ

সদস্য দেশগুলোকে গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২০১৬-২০২১ সালের একই সময়ের মধ্যে দেশগুলোর গড় ব্যবহারের তুলনায় আগস্ট থেকে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত ১৫ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার কমাতে বলছে ইইউ।
ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ আরও কমিয়ে দেওয়া হবে- রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এমন বক্তব্যের একদিন পর ইইউ গ্যাসের ব্যবহার কমানোর এই লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
আগামী ২৬ জুলাই এই প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবটি গৃহীত হতে ২৭টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ৭২ শতাংশ অর্থাৎ ন্যূনতম ১৯টি দেশের সমর্থন লাগবে।
সদস্যরাষ্ট্ররা ইইউ'র এই প্রস্তাবকে কীভাবে দেখছে?
রাশিয়া থেকে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি ইইউ দেশ গ্যাস ব্যবহার কমানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
পরিকল্পনাটি উপস্থাপনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পোল্যান্ড ও স্পেন তাদের বিরোধিতার কথা জানায়।
স্পেনের জ্বালানি মন্ত্রী তেরেসা রিবেরা বুধবার বলেন, তার দেশ প্রস্তাবটি সমর্থন করবে না কারণ স্পেন রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল নয়।
পর্তুগিজ জ্বালানি মন্ত্রী জোয়াও গালাম্বাও বৃহস্পতিবার বলেন, তার সরকার পুরোপুরি রেশনিং পরিকল্পনার বিরুদ্ধে।
পর্তুগালের এক্সপ্রেসো সংবাদপত্রকে তিনি বলেন, ইইউর প্রস্তাবে স্পেন ও পর্তুগালের জলবিদ্যুতের প্রসঙ্গ আসেনি। অথচ চলমান খরার কারণে জলবিদ্যুতের পরিবর্তে গ্যাসচালিত প্ল্যান্টে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে।
এদিকে, গ্রিসের জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে কয়লা চালিত বিদ্যুতের সক্ষমতা বাড়ানো, ভোক্তাদের পিক আওয়ারে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে বলা এবং বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হলেই কেবল জরুরি গ্যাস পরিকল্পনায় অগ্রসর হওয়া উচিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবটি পোল্যান্ডের বাধার সম্মুখীন হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। দেশটি ইতোমধ্যে ধারণ ক্ষমতার ৯৮ শতাংশ গ্যাস মজুদ করেছে। এছাড়া রাশিয়ান জ্বালানি আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হাঙ্গেরিও বিরোধিতা করতে পারে।
তবে ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, ইতালি, সুইডেন এবং জার্মানির মতো অনেক দেশই জ্বালানি সংকট সংক্রান্ত জরুরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দেশগুলো ইইউকে সমর্থন করবে।
এদিকে ইউরোপীয় অনেক নেতাই সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, আলজেরিয়া, আজারবাইজান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো থেকে বিকল্প গ্যাস সরবরাহের পিছনে ছুটছেন বলেও জানা গেছে।
রাশিয়া কী বলেছে?
মস্কো এখনও ইইউ-র পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা বারবার জানান দিচ্ছে যে রাশিয়া এখনও জ্বালানির একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপে গ্যাসের প্রবাহ কমছে বলে তারা দাবি করে।
বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গ্যাস নিয়ে ভন ডের লেয়েনের 'ব্ল্যাকমেইল' করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ সম্পর্কিত জটিলতাগুলো ইইউ ও এর সদস্য দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণেই সৃষ্টি হয়েছে।
রাশিয়া গত বছর ইউরোপের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ সরবরাহ করেছিল। ২০২০ সালে জার্মানি ছিল ইউরোপে রাশিয়ার বৃহত্তম জ্বালানি আমদানিকারক, দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ইতালি।
ইউরোপের দেশগুলো যখন ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানির বর্ধিত দাম এবং জীবনযাত্রার সামগ্রিক ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে, তখনই গ্যাস ব্যবহার কমানোর চিন্তা করছে ইইউ।
কোভিড-১৯ মহামারি উদ্ভূত অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে দেশগুলো যখন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন পুরোপুরি রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়লে অর্থনীতি আরেকবার আগের চেয়েও ভারি ধাক্কার সম্মুখীন হবে।
রাশিয়ার বারংবার নিশ্চয়তা প্রদান সত্ত্বেও ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) ইইউ-কে ভবিষ্যতে সবচেয়ে খারাপ কী ঘটতে পারে, সেসব কথা মাথায় রেখেই সতর্ক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
আইইএ-র নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, 'এই শীতকাল ইউরোপীয় সংহতির জন্য একটি ঐতিহাসিক পরীক্ষা হয়ে উঠতে পারে। এই পরীক্ষায় ইউরোপকে যেকোনো মূল্যে জিততে হবে। তা না হলে এর প্রভাব জ্বালানি খাতের বাইরেও বিস্তার লাভ করবে'।
সূত্র: আল-জাজিরা