পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, দলীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন রাজাপাকসে
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে শনিবার রাজনৈতিক নেতাদের বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করে নতুন সরকার আসার সুযোগ দিতে চান।
জানা গেছে শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট স্পিকারের সভাপতিত্বে একটি বৈঠকে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং বিক্রমাসিংহেকে পদত্যাগ করার অনুরোধ করেছেন দলীয় নেতারা।
কয়েক মাস ধরে চলমান অর্থনৈতিক অবনতির পর আজ শনিবার রাষ্ট্রপতির ভবন ও অফিসে চলা বিক্ষোভের মুখে তাদেরকে পদত্যাগের অনুরোধ করা হয়।
এর আগে, শ্রীলঙ্কার সংকট সমাধানে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য করা এই বৈঠকের আগে বিক্রমাসিংহে দলের কিছু নেতার সাথে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, রাজাপাকসে বিক্রমাসিংহকে জানিয়েছেন, বৈঠকে দলের নেতাদের নেওয়া সিদ্ধান্তকে তিনি সম্মান করবেন।
আজ শনিবার বিক্ষুব্ধ জনতা জোরপূর্বক রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশ করে। দেশটির প্রতিরক্ষা সূত্র থেকে রাজাপাকসেকে নিরাপদে সরানোর কথা বলা হলেও তার বর্তমান অবস্থান এখনো জানা যায়নি।
এর আগে, ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পডুজানা পেরামুনার একদল আইনপ্রণেতা রাজাপাকসেকে চিঠি দিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে পরামর্শ দেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই চিঠিতে অন্তত ১৬ জন আইনপ্রণেতা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
আজ শনিবার বড় বিক্ষোভের ডাক দেয় সরকারবিরোধীরা। মিছিল নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের দিকে যাওয়ার কথা জানান তারা। বিক্ষোভ দমাতে শুক্রবারই কলম্বোসহ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু কারফিউ দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশায় ভুগছে শ্রীলঙ্কা। নিত্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলারও নেই দ্বীপরাষ্ট্রটির কাছে। মূল্যস্ফীতির সূচক রেকর্ড পর্যায়ে গিয়ে থেকেছে। খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
দেশটির এই দুর্দশার জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকে দায়ী করে গত মার্চ থেকে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে বহু মানুষ।
গত সপ্তাহেই লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ঘোষণা দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গেছে।
শ্রীলঙ্কার জনগণ জ্বালানি কিনতে পারছে না। কিনতে পারছে না শিশুদের জন্য খাবারও।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)-এর ভাষ্যমতে, সব ছাপিয়ে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা রয়েছে মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। সংস্থাটির প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, দেশের ৭০ শতাংশ পরিবার বছরের শুরু থেকে খাদ্য ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে।
গত জুনে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি একটানা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, একদিনে দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ৫৪.৬ শতাংশে।
তবে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ স্টিভ হ্যাঙ্কের মতে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান মূল্যস্ফীতি ১২৮ শতাংশ।
- সূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস, বিবিসি