শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ভবনে বিক্ষোভকারীরা, পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া

আজ শনিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনে প্রবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সকালে তার বাসভবন ঘেরাও করে হাজারো মানুষ।
ঘেরাও হওয়ার পর গোতাবায়া তার সরকারি বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছেন বলে সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন দেশটির এক শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা।
এএফপিকে ওই সূত্র জানায়, 'প্রেসিডেন্টকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও জানান, জনতা যেন প্রেসিডেন্ট ভবনে তাণ্ডব চালাতে না পারে, সেজন্য আইনরক্ষা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
আজ সকালে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবন ঘেরাও করেন।
স্থানীয় টিভি চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কিছু বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন। পরে শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিররের এক ভিডিও ফুটেজেও দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ ঢুকে পড়ছেন প্রেসিডেন্ট ভবনে।
ডেইলি মিররের আরও একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অনেক বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট ভবনের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছেন।
ডেইলি মিরর-এর অনলাইন সংস্করণ জানায়, হাজার হাজার জনতা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে পৌঁছার পর পুলিশ সেখান থেকে সরে যায়। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে বলেও জানায় সংবাদমাধ্যমটি।
ডেইলি মিরর আরও জানিয়েছে, পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে কলম্বোর ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ শনিবার বড় বিক্ষোভের ডাক দেয় সরকারবিরোধীরা। মিছিল নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের দিকে যাওয়ার কথা জানান তারা। বিক্ষোভ দমাতে শুক্রবারই কলম্বোসহ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু কারফিউ দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না।

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশায় ভুগছে শ্রীলঙ্কা। নিত্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলারও নেই দ্বীপরাষ্ট্রটির কাছে। মূল্যস্ফীতির সূচক রেকর্ড পর্যায়ে গিয়ে থেকেছে। খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সংক্ষেপে চলমান সংকটের পূর্বাপর
- ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা: ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে শ্রীলঙ্কা। দেশটির মোট জনসংখ্যা ২ কোটি বিশ লাখ। সিংহলিজ, তামিল ও মুসলিম—এই তিন জাতিগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ।
- এক পরিবারের ভাইয়েরা বহু বছর শাসন করেছেন: ২০০৯ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরাজিত করে মাহিন্দা রাজাপাকসে সরকার। এর মাধ্যমে দেশটিতে চলা বহু বছরের তিক্ত ও রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। এর জেরে সংখ্যাগরিস্থ সিংহলিজদের কাছে নায়ক বনে যান মাহিন্দা। ওই সময় তার ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব—বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্ট।
- এখন অর্থনৈতিক সংকটে জনগণ রাস্তায়: ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটিতে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট। ফলে রাস্তায় নেমে এসেছে বিক্ষুব্ধ জনসাধারন। এই পরিস্থিতির জন্য তারা রাজাপাকসে পরিবার ও তাদের সরকারকে দায়ী করছে।

দেশটির এই দুর্দশার জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকে দায়ী করে গত মার্চ থেকে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে বহু মানুষ।
গত সপ্তাহেই লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ঘোষণা দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গেছে।
শ্রীলঙ্কার জনগণ জ্বালানি কিনতে পারছে না। কিনতে পারছে না শিশুদের জন্য খাবারও।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)-এর ভাষ্যমতে, সব ছাপিয়ে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা রয়েছে মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। সংস্থাটির প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, দেশের ৭০ শতাংশ পরিবার বছরের শুরু থেকে খাদ্য ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে।
গত জুনে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি একটানা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, একদিনে দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ৫৪.৬ শতাংশে।
তবে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ স্টিভ হ্যাঙ্কের মতে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান মূল্যস্ফীতি ১২৮ শতাংশ, যেখানে জিম্বাবুয়ের ৩৬৫ শতাংশ।

- সূত্র: এএফপি, রয়টার্স, হিন্দুস্তান টাইমস ও বিবিসি