টুইটার কেনার চুক্তি বাতিল করলেন ইলন মাস্ক! মামলা করবে টুইটার
চুক্তির একাধিক শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার কেনার ৪৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন টেসলা ও স্পেসএক্স সিইও ইলন মাস্ক।
মাস্ক জানিয়েছেন, স্প্যাম ও ফেক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নিয়ে তাকে কোনো তথ্য দিতে পারেনি টুইটার। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মটি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে টুইটার।
এ বিষয়ে টুইটারের চেয়ারম্যান ব্রেট টেইলর এক বিবৃতিতে বলেন, 'টুইটারের বোর্ড মাস্কের সঙ্গে সম্মত হওয়া মূল্য ও শর্তাবলীর উপর লেনদেন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চুক্তি কার্যকর করার জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বোর্ড। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা ডেলাওয়্যার কোর্ট অভ চ্যান্সারিতে জয়ী হব।'
প্রাথমিক মার্জার চুক্তি অনুসারে ১ বিলিয়ন ডলার 'ব্রেক-আপ ফি' দেওয়ার কথা ছিল।
এর আগে ইলন মাস্ক বলেছিলেন, স্প্যাম ও ফেক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কত, তা যাচাই করে নথি না পাওয়া পর্যন্ত টুইটার কেনার চুক্তি স্থগিত রাখবেন তিনি।
টেসলার কর্ণধার এ নিয়ে টুইট করে লিখেছিলেন, 'স্প্যাম বা ভুয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা সত্যিই টুইটারের মোট ব্যবহারকারীর ৫ শতাংশের কম, তা গণনার স্বপক্ষে নথি না পাওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে টুইটার কেনার চুক্তি স্থগিত রাখা হচ্ছে।'
মাস্কের বিশ্বাস, টুইটারে স্প্যাম বা বট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ হবে।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলেই ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন টেসলার কর্ণধার।
এর আগে এপ্রিলের শুরুতেই টুইটারের ৯.২ শতাংশ মালিকানা কেনেন মাস্ক। টুইটারের বোর্ডেও তিনি যোগ দেবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু কয়েকদিন পরই সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন টেসলা সিইও।
তারপর শেয়ারপিছু ৫৪.২ ডলারে টুইটার কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মাস্ক। তিনি দাবি করেছিলেন, টুইটারে বাকস্বাধীনতার প্রসার ঘটাতে চান এবং সংস্থাকে ব্যক্তিগত মালিকানার আওতায় আনতে চান।
প্রাথমিকভাবে মাস্কের প্রস্তাবে রাজি না থাকলেও পরে টুইটারের শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে এই চুক্তিতে সম্মত হয় টুইটার। তবে এবার ইলন মাস্ক নিজেই পিছিয়ে এলেন এই চুক্তি থেকে।
এদিকে মাস্কের চুক্তি বাতিলের ঘোষণার পরপরই টুইটারের শেয়ারের দাম ৭ শতাংশ পড়ে গেছে।
টুইটারের আসলেই বট-সমস্যা আছে। গতকালই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছেন যে, তারা একদিনে ১০ লাখ স্প্যাম অ্যাকাউন্ট সরিয়েছে।
ইলন মাস্ক চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলেও এই পর্যায়ে এসে তিনি আসলেই সরে দাঁড়াতে পারবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে হলে মাস্ককে প্রমাণ করতে হবে যে টুইটার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
মাস্কের টুইটার কেনার চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পেছনে অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারমূল্য গত কয়েক মাসে অনেক কমে গেছে। মাস্কের পিছিয়ে যাওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে।
নিজেকে বাক-স্বাধীনতার পক্ষের লোক বলে দাবি করেন মাস্ক। নিজ মালিকানায় তিনি কোম্পানিটির পরিচালন নীতি আরও শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কিছু মানুষের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করার জন্য টুইটারের সমালোচনা করে আসছেন মাস্ক।
প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের কাছে কীভাবে টুইটার উপস্থাপন করে, তা আরও স্বচ্ছ করার দাবিও জানিয়ে আসছেন তিনি।
- সূত্র: বিবিসি ও হিন্দুস্তান টাইমস