চরম আর্থিক সংকটের মুখে ঋষি সুনাকই আগামী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী!
ঋষি সুনাক ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ৪২ বছর বয়সী এই তরুণ পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। ইতোপূর্বে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনা লকডাউনে নিজের সরকারি বাসভবনে মদের পার্টি দেওয়ার কারণে দল তাকে পরিত্যাগ করার পর সুনাক প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রীর পদে লড়াইয়ে নামেন।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ থেকে পাঞ্জাবি হিন্দু ধর্মাবলম্বী তার পিতা-মাতা ১৯৬০ সালে ব্রিটেনে অভিবাসন করেছিলেন। ১৯৮০ তে ঋষি সুনাকের জন্ম হয়। ব্রিটেনেই বেড়ে ওঠা এ রাজনীতিক দ্বিতীয়বার বরিস জনসনের বিজয়ের পর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ পরিষ্কার হয়েছিল ব্রেক্সিট গণভোটের ফলে। খুব সামান্য ব্যবধানে গণভোটে বরিস জনসন জয়লাভ করেছিলেন।
২০০৩ সালে 'ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র রয়েছে' এমন ভ্রান্ত তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে ইরাক আক্রমণের অন্যতম সঙ্গী লেবার পার্টির সরকার ও তার নেতা টনি ব্লেয়ার। ব্রিটিশ জনগণ দ্রুত উপলব্ধি করেছিল একটা অন্যায় যুদ্ধে তারা যুক্ত হয়েছে। তার মূল্য লেবার পার্টিকে দিতে হয়েছিল। ব্রিটিশ জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেয় লেবার পার্টির ওপর থেকে এবং ক্ষমতায় বসায় টরিদের।
বর্তমানে ব্রিটিশ জনগণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, যার ফলে বিভাজন অনেক বেশি মাত্রায়। এবং একটি চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি। গত ৪০ বছরের মধ্যে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র শ্র্ম সংকট, অর্থাৎ শ্রম শক্তির অভাবে ভুগছে ব্রিটেন। এমনি একটি সংকটময় অর্থনৈতিক অবস্থায় ঋষি সুনাকের দায়িত্ব গ্রহণের চেষ্টা কতটা সাফল্য লাভ করবে, তা সময়ই বলবে।
তবে এ কথা বলা যায়, ব্রিটিশ ঝানু পলিটিশিয়ানরা এই মুহূর্তের অর্থনৈতিক সংকটের দিকে নজর রেখেই খানিকটা নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এই সংকটের দায়ভার তারা এড়িয়ে যেতে পারবেন বলে মনে হয় না। আজই নিষ্পত্তি হবে, পরবর্তী দলীয় ভোটারদের ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হবে। ইতোমধ্যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে আজ সন্ধ্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে ঋষি সুনাক সরাসরিই নির্বাচিত হবেন।
যদি প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে তাহলে সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরবর্তী নেতা নির্বাচিত হবেন। সময়ের স্বল্পতার কারণে এবার সকলে অনলাইনে ভোট দেবেন। এর আগের বার ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ১৮ হাজার। ১ লক্ষ ৭২ হাজারের মধ্যে ৬০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। এবার অনলাইনে কত ভোটার ঋষির পক্ষে ভোট দেন তা এখনই সুস্পষ্ট নয়। তবে দেশটিতে এখনও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্ণবাদী এই দলটির ৬৫ বছরের ওপরের প্রায় ১৫ শতাংশ ভোটার আছে। বিগত দলীয় ভোটের সময়ে যে ব্যবধান ঋষির বিপক্ষে সৃষ্টি হয়েছিল, তাই অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা যায়।
বিশ্ব পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নয়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্ব বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে ওপেক প্লাস দেশগুলো যে উপনিবেশিকতা সৃষ্টি করেছে, তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর ওপর উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করা কিংবা মহাসাগরের শেষ প্রান্তে এসে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছে, তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নয়ন হবে না।
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের মুদ্রাস্ফীতির মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জ্বালানি সংকট। সবচেয়ে সক্ষম রাষ্ট্রগুলো মুদ্রাস্ফীতির শিকারে পরিণত হয়েছে। ব্রিটেন ছাড়া জার্মানি ও জাপানও এই অবস্থার শিকারে পরিণত হয়েছে। আমাদের কথা তো বাদই দিলাম। পৃথিবীর মুদ্রাস্ফীতির এই পরিস্থিতিতে চীন এবং রাশিয়ায় এ থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। রাশিয়াকে যতই তারা অর্থনৈতিক সংকটে ফেলার চেষ্টা করুক বাস্তবে তা ঘটছে না। রাশিয়ার পণ্য বাজার চীনের জন্য আরও ব্যাপক সুবিধা এনে দিয়েছে। চীন এবং রাশিয়া উভয়ে নিজ কারেন্সিতে ব্যবসা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ন্যূনতম কাজ করছে না রাশিয়ার ওপর। কেবল কিছু দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সংকটে ফেলেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তাও কাটিয়ে উঠেছে রাশিয়া। এবং তাদের মুদ্রা মান ডলারের বিপরীতে উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। চীন তার মুদ্রা মান স্থিতিশীল রেখেছে।
সবকিছু মিলিয়ে ঋষি সুনাকের এই মুহূর্তে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়া কতটা সুখকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে। যদি দলীয় ভোটারদের ভোটের মুখোমুখি হতে না হয়, তাহলে হয়তো ঋষি সুনাক হচ্ছেন আগামী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।