রাজধানীর যেসব এলাকায় উষ্ণতার ঝুঁকি বেশি
চলমান তাপপ্রবাহের পাশাপাশি গরম বাতাস ও সূর্যের প্রখরতার কারণে বর্তমান আবহাওয়া দেশের মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠছে। আগামী দিনগুলোতে চলমান তাপপ্রবাহ আরও তীব্র হতে পারে এবং ২৯ এপ্রিলের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। রাজধানী থাকায় তীব্র গরমে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে ২৪ এপ্রিল প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে রাজধানীর বেশকিছু অঞ্চলের উষ্ণতার মাত্রা নিয়ে সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে। তাপমাত্রা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, দরিদ্র মানুষের উপস্থিতি এবং ঘনবসতির পরিমাণ ও বস্তির সংখ্যা বিবেচনা করে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
সমীক্ষায় রাজধানীর সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কামরাঙ্গীরচর ও আদাবরকে। পাশাপাশি ধানমন্ডি এলাকাতেও উষ্ণতার মাত্রা তীব্র হয়ে উঠছে। উষ্ণতার বিপদে থাকা এলাকাগুলো হল— কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, গাবতলী, গোড়ান, বাসাবো, টঙ্গী, শহীদনগর, বাবুবাজার, জুরাইন, হাজারীবাগ, পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী, তেজকুনীপাড়া, নাখালপাড়া, সায়েদাবাদ, কুর্মিটোলা, আজমপুর, কামারপাড়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর ও মহাখালী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কামরাঙ্গীরচর ও আদাবরের তাপমাত্রা বেশী থাকায় বাইরে বের অল্প সময় বাইরে অবস্থান করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব এলাকার শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম কাজ করতে পারছেন। তাপপ্রবাহের কারণে এসব এলাকার দরিদ্র মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজধানীর শাহবাগ, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উষ্ণতার মাত্রা সবচেয়ে কম। এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে তুলনামূলক কম বিপদে আছেন।
এদিকে শাহবাগ, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় উষ্ণতার মাত্রা কম। এছাড়া রাজধানীর উত্তরখান, খিলক্ষেত ও ডেমরা এলাকাতেও উষ্ণতার মাত্রা কম।
রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর মধ্যে মতিঝিল, ফার্মগেট, মহাখালী, কারওয়ান বাজার ও গুলশান এলাকায় উষ্ণতা মাত্রাতিরিক্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। কিন্তু এসব এলাকার বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে ভেতরে অবস্থান করা মানুষ কম ঝুঁকিতে থাকলেও ভবনগুলোর বাইরে বা সড়ক ও খোলা স্থানে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নগরবিদ ও পরিবেশবিশেষজ্ঞরা মতে, ঘনবসতি, অতিরিক্ত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার, গাছপালা ও জলাভূমি কমে যাওয়া এবং কংক্রিটের স্থাপনার জন্য রাজধানীতে তাপমাত্রার পাশাপাশি অতি উষ্ণতার ঝুঁকি প্রতি বছর বাড়ছে।
আবহাওয়াবিদদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার যেসব এলাকার গাছপালা ও জলাভূমি কম সেগুলোর তাপমাত্রা গাছপালা ও জলাভূমি জলাভূমি আছে এমন এলাকার থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ৩০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত তাপ সতর্কতা বাড়িয়েছে কারণ চলমান তাপপ্রবাহ গতকাল থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এই মাসে এটি ৭ম তাপপ্রবাহ সতর্কতা।