৭,০০০ কোটি টাকা বিনিময় হারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের পদক্ষেপ চায় বিআইপিপিএ
দেরিতে বিল পরিশোধ করায় বিনিময় হারের তারতম্যের কারণে ৭,০০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে উল্লেখ করে গতবছরের জুলাই থেকে 'ট্রু আপ অফ ফরেন এক্সচেঞ্জ' সুবিধা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছে বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্ট মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ)।
১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিআইপিপিএ বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ট্রু আপ অফ ফরেন এক্সচেঞ্জ সুবিধা কার্যকর করতে অনুরোধ জানিয়েছে। তারা বলছে, গত বছরের মার্চ থেকে টাকার দরপতন শুরু হলে কোম্পানিগুলো আর্থিক সংকটে পড়ে। গত মে থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে টাকার ব্যাপক দরপতনের কারণে তীব্র লোকসানের মুখে পড়েছে কোম্পানিগুলো। তাই এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাচ্ছে তারা।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ফার্নেস অয়েল বেজড ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে (আইপিপি) ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল এলসি খোলার সময়কার এক্সচেঞ্জ রেটের বদলে ফুয়েল পেমেন্টের বৈদেশিক মুদ্রা অংশের ট্রু-আপ পেমেন্ট করতে একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়াটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই আইন পাস হলে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে চুক্তি করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। ওই চুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকে ট্রু আপ পেমেন্ট কার্যকর করবে সরকার।
'ট্রু-আপ পেমেন্ট' শব্দটি মূলত বিভিন্ন আর্থিক প্রসঙ্গ, যেমন– আর্থিক চুক্তি কিংবা লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এর দ্বারা পেমেন্টের অনুমিত বা অস্থায়ী পরিমাণ এবং প্রকৃত পরিমাণের পার্থক্যের মধ্যে সামঞ্জস্য করা হয়।
গতবছরের ১ জুলাই থেকে এই সুবিধা কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে বিআইপিপিএ প্রেসিডেন্ট ফয়সাল খান লিখেছেন, খসড়া আইনটি চূড়ান্ত না হওয়ায় ট্রু-আপ পেমেন্ট চুক্তি বাস্তবায়নের তারিখ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
"আমরা ১ জুলাই ২০২২ তারিখ থেকে পরিশোধ করা মাসিক বিলের জন্য ট্রু-আপ সুবিধা দিতে আপনার সদয় বিবেচনা কামনা করছি। এটি মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের দেরিতে অর্থ প্রদানজনিত সমস্যা থেকে স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্পকে রক্ষা করবে এবং দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে," তিনি বলেন।
ফয়সাল খান আরও বলেন, ২০২২ সালের মে মাসে জ্বালানি আমদানির জন্য এলসি খোলার সময় বিনিময় হার ছিল ডলারপ্রতি ৮৬ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড দেরিতে বিল পরিশোধ করায় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে এলসি নিষ্পত্তির জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ডলারপ্রতি ১০৫ টাকা করে গুনতে হয়। এরপরেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ডলারে ৮৬ টাকা করেই বিল পরিশোধ করে এবং কোম্পানিগুলো জ্বালানি আমদানির এলসি নিষ্পত্তির জন্য ডলারপ্রতি অতিরিক্ত ১৯ টাকা গুনতে বাধ্য হয়।
ফয়সাল খান চিঠিতে আরও বলেন, "গত বছরের মার্চ মাস থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন, মাসিক বিল পরিশোধে বিলম্ব এবং উচ্চ সুদ হারের কারণে আমাদের কিছু সদস্য কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং সামষ্টিকভাবে ৭,০০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।"
পাওয়ার পার্চেস অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) অনুযায়ী, ফার্নেস অয়েল বেজড আইপিপিগুলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আগাম অনুমতি নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী নিজেরা ফার্নেস অয়েল আমদানি করে সাতদিনের মধ্যে বিপিডিবিতে ইনভয়েস জমা দেবে। তার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিপিডিবি বা সরকার বিল পরিশোধ করবে।
নিয়মানুযায়ী, আইপিপিগুলো বিপিডিবিতে বিল জমা দেওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ তা যাচাই করে ভর্তুকির অর্থছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা ছাড় করে, যা বিপিডিবি আইপিপিগুলোকে পরিশোধ করে। এতে প্রায় দুই মাস সময় লাগতো।
তবে ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে সরকারের টাকার সংকট দেখা দিলে এই বিল পরিশোধে বাড়তি সময় লাগা শুরু হয়। বর্তমানে সরকার বকেয়া পরিশোধে প্রায় পাঁচ মাস পিছিয়ে রয়েছে।