দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় রমজান সামনেও বিক্রি কম, হতাশ ব্যবসায়ীরা
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ শতাংশ, আটার দাম বেড়েছে ৫৬ শতাংশ আর চিনির দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। শুধু তাই নয়, রমজানে যেসব পণ্য বেশি কেনা হয়, যেমন- ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, খেজুর, আদা ও রসুন- এসব পণ্যের দামও গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম বাড়তি থাকায় তাদের বিক্রি কমে গেছে।
শুক্রবার কারওয়ান বাজার ও কল্যাণপুর বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজান সামনে গত বছরের তুলনায় তাদের এবারের বিক্রিতে ব্যাপক পতন ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনও ঘটতে দেখা যায়নি দেশে।
"প্রতি কেজি চিনি ১১৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৮৫ টাকা। দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বিক্রিও কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। রমজানের আগের শেষ শুক্রবারে আগে ভিড় থাকতো ক্রেতাদের, কিন্তু এবার সেটি নেই," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বললেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের দোকানদার আলী হোসেন।
রাজধানীর অন্যান্য বাজারের ব্যবসায়ীরাও একই কথা জানালেন। তাদের দাবি, আগের বছরের তুলনায় এবারের রমজান সামনে তাদের বেচা-বিক্রি কমেছে প্রায় অর্ধেক। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই হতাশ। বিশেষ করে, মধ্যম এবং নিম্ন আয়ের লোকেদের দৈনন্দিনের বাজারের চাহিদা পূরণ হয়ে উঠেছে কঠিন।
শুক্রবার কারওয়ান বাজারে কথা হয় মোহম্মদ ইসরাফিলের সঙ্গে। তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে কলাবাগান এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন ইসরাফিল। হোটেলে কাজ করে মাসে আয় করেন ১৬,০০০ টাকা। জানালেন, এবার আর রমাজানের জন্য আলাদাভাবে বাজার করতে পারেননি তিনি। "মুরগি কিনতে ইচ্ছে করেছিল, কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারলাম না। ব্রয়লার মুরগি গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে। রমজান আসছে, জানিনা কীভাবে চলবে সংসার। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে," যোগ করেন ইসরাফিল।
তিনি বলেন, "এক বছরের ব্যবধানে জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে, কিন্তু বেতন বাড়েনি। সর্বশেষ দুই মাস আগে মুরগি কিনেছি। এখন সবজি, ডাল দিয়েই কোনো রকমে ভাত খাই।"
নাখালপাড়া এলাকার আরেক ক্রেতা মুক্তা বেগম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে টিকে থাকতে সন্তানসহ লড়াই করছেন তিনি।
ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে মুক্তা বেগম বলেন, "টিসিবির কার্ড সবাই পায় না। গত বছর আমি লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির কিছু পণ্য নিতে পারেছিলাম, কিন্তু এবার তা সম্ভব হয়নি।"
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সরকার এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য দিচ্ছে। কিন্তু শুধু এক কোটি পরিবারকে দিলেই হচ্ছে না, প্রয়োজন আরও অনেক। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্তদের, যাদের আয় নির্দিষ্ট, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
"যারা একটি নির্দিষ্ট বেতনে চাররি করেন, তারা বেশি অসুবিধায় আছেন। তারা তো আর সরকারের দেওয়া সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পান না, তাদের সংখ্যাটা বেশি," যোগ করেন তিনি।
আরও উল্লেখ করেন, "এখন সরকারকে নজর রাখতে হবে যাতে পণ্যের সংকট না হয়। সাপ্লাই চেইন যেন ঠিক থাকে, এটি ঠিক থাকলে কিছুটা সহনীয় মূল্যে পণ্য পাওয়া যাবে।"
"ব্যবসায়ীরাতো লাভ ছাড়া ব্যবসা করবে না। তবে বিদেশে যেটা দেখা যায়, যখন কোনো উৎসবের মৌসুম আসে তখন তারা পার ইউনিট কম লাভ করে বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে লাভবান হন। কিন্তু আমাদের এখানে পার ইউনিট বেশি লাভ করার চেষ্টা করা হয়। আমাদের ব্যবসায়ীরা যেন তাদের মতো প্রতি ইউনিটে কম লাভ করে বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে ব্যবসা করে, সেই প্রত্যাশা করি," যোগ করেন তিনি।
বেড়েছে সবজির দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহম্মদ রমজান জানান, গত সপ্তাহে বেগুনের কেজি ছিল ৪০ টাকা, কাল সেটি ছিল ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে চিচিঙ্গা ছিল ৪০ টাকা, এখন সেটি ৭০ টাকা; ২০ টাকা কেজির টমেটো এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
এছাড়া এক ডজন লেবু ১২০ টাকা এবং কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বিক্রেতারা বলছেন, এই পণ্যের দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।