জীবিত মুখ আর দেখতে পাবেন না! প্রিয়জনের খোঁজে হাসপাতাল, মর্গ ছুটে যাচ্ছেন স্বজনরা
বিধ্বস্ত দুই ভবনের সামনে শত শত মানুষের জটলা। রাস্তার ডিভাইডারে উন্মুখ হয়ে বসে আছেন নিখোঁজ মানুষের ক্লান্ত স্বজনেরা। গতকাল (৭ মার্চ) বিকালের পর থেকে বাসায় যাননি কেউ। হাসপাতাল, মর্গ সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষে প্রিয়জনদের জীবিত মুখ দেখতে পাওয়ার আশা বাদই দিয়েছেন। উদ্ধার কাজ শেষ হলে তাদের লাশ পাওয়া গেলেও স্বস্তি!
রাজধানীর গুলিস্তানে মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিস্ফোরিত হওয়া ভবনের সামনের দৃশ্য এটি৷ অপেক্ষারত স্বজনহারাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো নিখোঁজ অন্তত তিন থেকে চারজন। তাদের মধ্যে তিনজন ছিলেন ভবনের বেজমেন্টে অবস্থিত স্যানিটারি দোকানে কর্মরত।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ৭তলা ভবনের বেজমেন্টের 'বাংলাদেশ স্যানিটারি' নামের দোকানের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান স্বপনের অপেক্ষায় ছিলেন তার শ্যালক নূর নবী। দুর্ঘটনার খবর শুনে গতকাল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি। নিখোঁজ স্বপনের স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে থাকতেন নোয়াখালী। প্রিয়জনের খোঁজে দিশেহারা হয়ে সবাই এসেছেন রাজধানীতে।
নূরনবীর ভাষ্যে, "সন্ধ্যা থেকে বিল্ডিংয়ের সামনে বসে আছি। আমার বোনের অবস্থা খুব খারাপ। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাগল অবস্থা। ছেলেটার বয়স ১০, মেয়েটার ৭ বছর। কাল এক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিস জানালো আর উদ্ধার কাজ চালাতে পারবে না রাতে। সকালে পুলিশের সাথে কয়েক দফা তর্ক হয়েছে আমাদের। প্রশাসন কিছু করতে না পারলে আমাদের বলুক, আমরা নিজেরা খুঁজে বের করব।"
অপেক্ষারত স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, সকাল ১০টায় শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফার উদ্ধার কার্যক্রম। তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিখোঁজদের পরিবারবর্গ।
একই ভবনের বেজেমেন্টে অবস্থিত আনিকা স্যানিটারির মালিক মমিনুদ্দিন সুমনের খোঁজে গতকাল বিকেল থেকে বসে আছেন তার শ্বশুর আব্দুর রউফ। জামাইয়ের খোঁজ না নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের সামনে যাওয়ার সাহস নেই তার। কিছুক্ষণ পরপর কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি। আনিকা স্যানিটারিতে কর্মরত রবিন হোসেনের খোঁজও মেলেনি এখনো।
"রাতে উদ্ধার কাজ বন্ধ কইরা দিলো। সকালেও দেরি কইরা শুরু করলো। কালকে বিকাল থেইকা এখন দুপুর হইয়া গেছে। এখন পর্যন্ত আমার মেয়ে জামাইকে পাইলাম না, তার স্টাফকেও পাইলাম না। আর কতক্ষণ এভাবে থাকবো। কেউ শোনে না আমাদের কথা, কেউ শোনে না," বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আব্দুর রউফ।
এদিকে, ছেলে মোহম্মদ মালেককে (১২ বছর) খুঁজতে এসেছেন মোহাম্মদ রতন মিয়া।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি জানান, তার ছেলে সাভারের হেমায়েতপুরে একটি ইট ভাটায় কাজ করে। বিক্রমপুরে বেড়াতে গিয়েছিল, সেখান থেকে সকাল ৯ টায় সাভারের উদ্দেশে রওনা দেয়। গুলিস্তান নেমে সাভারের গড়িতে হেমায়েতপুরে কাজে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেনা না।
"ছেলেকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। এখন সন্দেহ করছি, ছেলে এই দুর্ঘটনায় পড়ে থাকতে পারে। তাই ঢাকা মেডিকেলে খুঁজতে এসেছি," যোগ করেন রতন মিয়া।
গতকাল বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে বিস্ফোরণের পর এখন পর্যন্ত গুলিস্তানে নিহতের সংখ্যা ১৮ জন। আহত অন্তত ১২০ জন। এই প্রতিবেদন লেখা অবধি বিস্ফোরণের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। র্যাবের সন্দেহ, ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। আর তিতাস গ্যাস বলছে, সে সম্ভাবনা নেই। কারণ গ্যাস লিকেজে এমন হলে ব্যাপক আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতো।
আজ বুধবার (৮ মার্চ) দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে উদ্ধারকাজ। দুপুরে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী।