ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তুঙ্গে ফ্ল্যাটের চাহিদা, চাঙা আবাসন ব্যবসা
- বছরে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ ফ্ল্যাট, যার মূল্য অন্তত দেড়শ কোটি টাকা
- জায়গা স্বল্পতার কারণে ফ্ল্যাটের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না
- সংকটের কারণে ফ্ল্যাটের দাম আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে
- ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করলে ফ্ল্যাট বিক্রি বাড়বে দ্বিগুণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে ফ্ল্যাটের চাহিদা। প্রতিবছর জেলা শহরে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ রেডি ফ্ল্যাট। যার মূল্য অন্তত ১৫০ কোটি টাকা।
ফ্ল্যাটের চাহিদা এখন এমন যে, যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।
মূলত শহরে জায়গা স্বল্পতা এবং ভবন নির্মাণে অনুমোদন প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় চাহিদা মতো ফ্ল্যাট তৈরি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া সংকট এবং নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছর দশেক ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবাসন ব্যবসা চলছে। তবে গেল পাঁচ বছর ধরে বেড়েছে ফ্ল্যাটের চাহিদা।
মূলত বাড়ি নির্মাণের জন্য জায়গা-জমি কেনা, নির্মাণ সামগ্রী রাখার জায়গার অভাব এবং ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোদন নেওয়াসহ নানা জটিলতা এড়াতে মানুষ এখন ফ্ল্যাটের দিকে ঝুঁকছেন।
এছাড়া স্বল্পতার কারণে জায়গার দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ার পাশাপাশি নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার পর থেকেই তুঙ্গে ফ্ল্যাটের চাহিদা।
জেলা শহরের পাইকপাড়া, কাজীপাড়া, হালদারপাড়া এবং মুন্সেফপাড়ায় ফ্ল্যাটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
বর্তমানে এলাকাভেদে ফ্ল্যাটের প্রতি স্কয়ারফিটের মূল্য ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। যা আগে ছিল ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আল আমিন জানান, শহরে জমির দাম এখন আকাশছোঁয়া। এছাড়া বাড়ি নির্মাণের জন্য বিভিন্ন অনুমোদন আনাসহ নানা জটিলতায় পড়তে হয়।
এসব ঝামেলা এড়াতে তিনি এক হাজার স্কয়ারফিটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ৩২ লাখ টাকায়। রেডি ফ্ল্যাট পাওয়ায় কেনার পরদিনই ফ্ল্যাটের উঠতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
শহরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম জানান, শহরের অলি-গলির ভেতরের জায়গাও এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ক্রমেই তা বাড়ছে।
ফলে জায়গা কিনে বাড়ি নির্মাণ করা মধ্যবিত্তদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ১৫ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠান আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছে। যারমধ্যে কয়েকজন ঠিকাদারও আছেন।
মূলত এলাকা এবং অবস্থান অনুযায়ী জায়গার মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। কিছু ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ আবার কোনো কোনো জায়গার জন্য নির্মিত ভবনের ৫০ শতাংশ করে পান জায়গার মালিক এবং সংশ্লিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী। ভবন নির্মাণের পুরো খরচ বহন করে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো।
কয়েকজন আবাসন ব্যবসায়ী জানান, ভবন নির্মাণের জন্য পৌরসভা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। যে স্থানে ভবন নির্মাণ করা হবে- তার পাশে ১৪ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত রাস্তা থাকলেই ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের অধিকাংশ এলাকাতেই এই আকারের রাস্তা নেই বলে দাবি আবাসন ব্যবসায়ীদের। এজন্য ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত বিদ্যমান বিধিতে কিছুটা শিথিলতা চান তারা।
আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রফিক কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, 'মানুষ বাড়ি নির্মাণের ঝামেলা এড়াতে ফ্ল্যাটের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। সবাই চান ঝামেলামুক্ত আবাসন। এক্ষেত্রে আমরা মানুষকে সেই সুবিধা দিচ্ছি। এছাড়া মধ্যবিত্তরা কিস্তির মাধ্যমেও ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন।'
আরেক আবাসন ব্যবসায়ী মো. কাদের উজ্জামান বলেন, 'নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বাড়ার কারণে এখন ফ্ল্যাট তৈরিতে খরচ পড়ছে বেশি। প্রতি স্কয়াফিটে এখন খরচ পড়ছে দুই হাজার টাকারও বেশি। তাছাড়া ছয়তলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন দিচ্ছেনা পৌরসভা। এসব কারণে ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা বেশি।'
এম. কে. বিল্ডার্সের সত্ত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম বলেন, 'বছরে আড়াইশ থেকে তিনশ ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই চাহিদা। কিন্তু জায়গা স্বল্পতা এবং ছয়তলার বেশি উচ্চতার ভবন তৈরির অনুমোদন না থাকায় আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্ল্যাট দিতে পারছি না। শহরের অধিকাংশ এলাকায় ১৬ ফুটের রাস্তা নেই।'
'ভবন নির্মাণের জন্য বিদ্যমান বিধি যদি কিছুটা শিথিল করে ছয়তলার অধিক উচ্চতার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়, তাহলে ফ্ল্যাট বিক্রি বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হবে। পাশাপাশি ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন'- উল্লেখ করেন কামরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, 'সর্বনিম্ন ১৪ ফুটের রাস্তা থাকলেই ছয়তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা যাবে। তবে এটি পৌরসভার কোনো বিধি নয়। সরকার থেকেই এটি নির্ধারণ করা হয়েছে।'
'মূলত মানুষের হাঁটাচলা এবং যানবাহন যেন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে- সেজন্যই এই বিধান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পৌরসভার কিছু করার নেই,' বলেন তিনি।