রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট চরমে
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক, ভাটারা, মাটিকাটা, আফতাবনগর, বাড্ডা, ভাটারাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ওয়াসার গাড়ির পানি কিনেও মেটাতে পারছে না পানির চাহিদা।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছু স্থানে ডিপ টিউবয়েল নষ্ট হওয়ায় এবং কিছু স্থানে নতুন ডিপ টিউবয়েল বসানো হচ্ছে তাই সমস্যা হচ্ছে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে এ সমস্যা কেটে যাবে বলে আশ্বস্ত করেছে ওয়াসা। লোডশেডিংয়ের কারণেও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেছেন ওয়াসা কর্মকর্তারা।
একদিকে লোডশেডিং, অন্যদিকে পানির তীব্র সংকট। এই দুই সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অন্তত কয়েক লাখ মানুষ। এ অবস্থায় সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বাসার বৃদ্ধ ও শিশুরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার ওয়াসায় যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
মোহাম্মদপুর আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটিতে গত তিনদিন ধরে নেই ওয়াসার পানি সরবরাহ। টাকা দিয়ে ওয়াসার গাড়ির পানি কিনেও চাহিদা মেটাতে পারছেন না এ হাউজিংয়ের বাসিন্দারা।
এ হাউজিং সোসাইটির একটি ভবনের বাসিন্দা মাহতাব হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'তিনদিন ধরে ভবনে ওয়াসার পানি সরবরাহ নেই। ওয়াসার গাড়ি থেকে কিনেও পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে বোতলজাত পানি কিনে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে। ওয়াসাকে বার বার বিষয়টি জানানোর পরেও সমাধান মেলেনি।'
এদিকে প্রায় ১৫ দিন ধরে আফতাব নগরের এ ও বি ব্লকের কোনো বাড়িতেই ওয়াসার সুপেয় পানি আসে না। পানি সংকটে রান্না, খাওয়া, গোসলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো কাজই করতে পারছেন বলে জানান এ এলাকার বাসিন্দারা।
ভাটারা খিলবাড়িরটেক এলাকার বাসিন্দা লাবনি আক্তার টিবিএসকে বলেন, 'গরমকাল আসলেই প্রতি বছর আমাদের এখানে পানির সংকট শুরু হয়। এবছর এ সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়াসার লাইনে সকালে পানি আসলে তা ধরে রেখে সারাদিন চলতে হয়। মাঝে মাঝে ২/৩ দিন পরেও পানি আসে।'
তিনি বলেন, 'পানির সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক বাড়ির মালিকই চুরি করে ডিপ টিউবয়েল বসিয়ে নিয়েছে। তাদের বাসায় ওয়াসার লাইন থাকলেও মূল চাহিদা মেটায় ডিপ টিউবয়েল দিয়ে। তবে আমাদের এ ব্যবস্থা না থাকায় ওয়াসার পানির উপরই নির্ভর করতে হয়।'
মিরপুর এলাকার মোডস জোন-১০ এর ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল হাবিব চৌধুরী বলেন,'এ তথ্য আমি দিতে পারবো না, সব তথ্য ওয়াসার প্রধান কার্যালয় থেকে নিতে হবে।'
মোহাম্মদপুর এলাকার ঢাকা ওয়াসার মোডস জোন-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাকিম হোসেন বলেন, 'এ জোনের মধ্যে শেখেরটেক ও বায়তুল আমান হাউজিং এলাকায় সমস্যা হচ্ছে। এখানের সমস্যা সমাধান হতে ২/১ দিন সময় লাগবে। এক এলাকায় নতুন করে ডিপ টিউবয়েল বসানো হচ্ছে এবং একটি রিপেয়ার করা হচ্ছে। তবে চেষ্টা করছি অন্য পাম্পের মাধ্যমে পানির সরবরাহ ঠিক রাখার। এছাড়া লোডশেডিং আমাদের স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এছাড়া কিছু কিছু এলাকায় সিটি কর্পোরেশন রাস্তায় কার্পেটিং করে আমাদের পাইপলাইনের সুইচ আটকে দিয়েছে, এ কারণেও সমস্যা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর ঢাকার একেকটি এলাকায় মানুষ যেভাবে বাড়ছে আমাদের পাম্পগুলো সে অনুযায়ী চাহিদা মেটাতে পারছে না।
তবে ওয়াসার হিসাব বলছে, ঢাকা ওয়াসার দৈনিক প্রায় ২৭০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পানি উৎপাদন করা হয় ৯১ কোটি লিটার, আর বাকি ১৭৯ কোটি লিটার গভীর নলকূপ থেকে উৎপাদন করা হয়। রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা দৈনিক ২১০ থেকে ২৪০ কোটি লিটার।
ঢাকা ওয়াসা বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দিনে ২/৩ বার লোডশেডিং এর কারণে পাম্প থেকে পানি উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে ওয়াসার দাবি কোথাও পানির লাইনে সমস্যা নেই। পানির উৎপাদনের ঘাটতির কারণেই কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে বলে দাবি ওয়াসার।
পানির সমস্যা সমাধানে ঢাকায় প্রায় ৯২০টি পাম্পের মধ্যে ১০০টির বেশি পাম্পে বোরিং করাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়াসা বলছে, বোরিং কাজ শেষ হলে পানির সমস্যার সমাধান হবে অনেকটাই। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গন্ধবপুর পানি শোধনাগার চালু হলে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসবে বলছে ওয়াসা।