ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে: চলতি আগস্টে হাসপাতালে ভর্তি ১,৫৬৮ জন
দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। চলতি জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৫৭১ জন। আগস্টের ১৯ দিনেই দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট (শুক্রবার) পর্যন্ত সারাদেশে মোট আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২২৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে কীটতত্ববিদরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে তথ্য দেওয়া হয় সেটি ডেঙ্গুর আসল চিত্র নয়। তারা ঢাকার মাত্র ৪৭ টি হাসপাতালের তথ্য দেয়। এর বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বাসায়ও অনেকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন, সে তথ্য কোনো হিসাবে আসছে না।
কীটতত্ববিদ কবিরুল বাশার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন সঠিক নয়। তারা শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদেরই তথ্য দেয়, এর বাইরের রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
তিনি বলেন, "অন্য দেশের অনেক শহরের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করলে দেখা যাবে, আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা কম কিন্তু মৃত্যু বেশি, এর কারণ হচ্ছে ডেঙ্গু সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা কম। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু হওয়ার কথা না। যদি সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা করা হয়, তাহলে সহজেই ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে পারে। আমাদের সমাজে ডেঙ্গু রোগী নিয়ে অবহেলা করার কারণে দেরি করে হাসপাতালে যাওয়ায় ঝুঁকি বেড়ে যায়। অন্য দেশে ডেঙ্গুর পরিসংখ্যানও হয় সঠিক এবং তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়।"
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন রোগী ঢাকার হাসপাতালে এবং ৮ জন ঢাকার বাইরের ছিলেন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রাজধানীতে ৩৩৫ সহ ৩৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী এখন সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার ৮১৩ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার সিলেট বিভাগ ছাড়া অন্য সব বিভাগে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত ৫৪২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর রয়েছে যথাক্রমে খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ। এসব বিভাগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৩৬ জন। ঢাকা মহানগরের বাইরে ঢাকা বিভাগে ২৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে, গত ১৩ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় বর্ষা মৌসুমের এডিস সার্ভে-২০২২ শুরু হয়েছে। এ জরিপ চলবে ২২ আগস্ট পর্যন্ত। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০টি স্থানে এ জরিপ চালানো হচ্ছে।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৩ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিন ধরে ডেঙ্গুর প্রাক-মৌসুমে 'প্রাক মৌসুম এডিস সার্ভে-২০২২' করেছিল। ফাঁদে যেসব মশা ধরা পড়েছে, তার মধ্যে ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা। বাকি ৫ দশমিক ১ শতাংশ এডিস মশা। নির্মাণাধীন ভবনে ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং বহুতলা ভবনে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া যায়, যা গত বছরের তুলনায় ছিল অনেক বেশি।
এ জরিপে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম এডিস লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জরিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার।
টিবিএসকে তিনি বলেন, "সার্ভে পুরোপুরি শেষ হলে বলা যাবে এ বছর মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কেমন। তবে প্রাথমিকভাবে যা পাচ্ছি, তাতে গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এবারে প্রাক-মৌসুম জরিপ করে সিটি কর্পোরেশনকে সতর্ক করেছিলাম তাই তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর্মসূচি পালন করেছে, যা প্রকোপ কমাতে সহায়তা করেছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে না, যার কারণেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা কম।"
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্তের চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২২ সালের মে থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ২৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩০১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছে ১ হাজার ৭৩১ জন।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল (১৮ লাখ ২৭ হাজার ৬১৭ জন), এরপর যথাক্রমে ভিয়েতনাম (১ লাখ ৩ হাজার ৪৩৩), ফিলিপাইন (৬৪ হাজার ৭৯৭), পেরু (৫৬ হাজার ২১) এবং ইন্দোনেশিয়া (৫২ হাজার ৩১৩) রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে (৭৩৭), এরপর রয়েছে ইন্দোনেশিয়া (৪৪৮), ফিলিপাইন (২৭৪), পেরু (৬৫) এবং পূর্ব তিমুর (৫৬)।