রাস্তা নেই উপহারের বাড়িতে যাওয়ার!
দিনাজপুরের হিলিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাকা ইটের বাড়ি উপহার পেলেও রাস্তা না থাকায় সেসব বাড়িতে উঠতে পারছেন না গৃহহীন অসহায় পরিবারগুলো। এসব বাড়িতে উঠতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের। এদিকে দীর্ঘদিন থেকে বাড়িগুলো পড়ে থাকায় সেগুলো মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে।
২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাকিমপুর উপজেলা ও পৌরসভায় ৭০টি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করা হয়। ইতোমধ্যেই তা উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তাতে যাওয়ার কোন রাস্তা না থাকায় এখনো উঠতে পারছেননা সেই বাড়িতে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। একইসাথে সেখানে বসবাস না করায় বাড়িগুলোতে নিয়মিত মাদকসেবীদের আড্ডা বসছে।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া শানু বেগম ও তার স্বামী জহুরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের শেষ সম্বল দিয়ে কোনরকম করে একটু জায়গা কিনেছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে আমরা আর সে জায়গাতে বাড়ি ঘর করতে পারিনি। টাকা খরচ করে বাড়ি করা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছিল, তার উপর ইটের বাড়ি করা ছিল দু:স্বপ্নের মতো। আমরা পরের জায়গাতে কষ্ট করে ছেলে সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করছিলাম।"
"কিন্তু আমাদের কষ্ট লাঘবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই জায়গাতে বাড়ি করে দিয়েছে। কিন্তু সেই বাড়িতে রাস্তার অভাবে আমরা বসবাস করতে পারছিনা। পাকা বাড়ি থেকেও ছেলে মেয়ে নিয়ে সরকারি জায়গাতে কোনরকমে ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে আমাদের থাকতে হচ্ছে। আমাদের মতো একই অবস্থা এখানে বরাদ্দ পাওয়া অপর এক পরিবারের। মাঠের মাঝখানে বাড়ি হওয়ায় কোন রাস্তা নেই সেখানে যাওয়ার। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের অনুরোধ যেন আমাদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়া হয়। তাহলে আমরা ছেলে মেয়েকে নিয়ে সুখে শান্তিতে সেই বাড়িতে বসবাস করতে পারবো।"
একই এলাকায় ঘর বরাদ্দ পাওয়া মামুনি আকতার বলেন, "সরকারের পক্ষ থেকে পাকা বাড়ি করে দেওয়া দেড় থেকে দু'বছর হয়ে গেলো কিন্তু সেই বাড়িতে যাওয়ার কোন রাস্তা ঘাট না থাকায় আমরা সেই বাড়িতে উঠতে পারছিনা। শুষ্ক মৌসুমে মাঠে ধান লাগানো থাকে, আর বর্ষা মৌসুমে পুরো এলাকায় এক হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকে, একমাত্র রাস্তা না থাকার কারণে বাড়ি বরাদ্দ পেয়েও সেই বাড়িতে উঠতে পারছিনা। এর কারণে ছেলে মেয়েকে নিয়ে এখন পর্যন্ত ভাড়া বাড়িতে থাকতে হচ্ছে আমাদেরকে। সরকার যদি একটু রাস্তার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমরা সেখানে ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করতে পারতাম।"
স্থানীয় এলাকাবাসী অনিল কুমার বলেন, "মাঠের মাঝখানে এই ঘর দেওয়ার কোন মানে হয়? গ্রামের মধ্যে যদি দিত তাহলে অন্তত তারা বসবাস করতে পারতো। এখন এমন জায়গাতে বাড়ি করে দিয়েছে সেখানে রাস্তা নেই কোন কিছু নেই। এখন দেবতার মতো ওখানে বাড়ি পরে থাকলো কোন লোক পুজাও দিতে পারবেনা বা কোনকিছু করতে পারবেনা। এতে করে সরকারের টাকা লোকসান হওয়া ছাড়া কিছুই নয়।"
স্থানীয় অপর এলাকাবাসী বাসন্তি মিন্ডি বলেন, "এখানে সরকারের পক্ষ থেকে দুটি বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এসব বাড়িতে যাওয়ার বা বের হওয়ার মতো কোন তাদের রাস্তা নেই। শুকনো মৌসুমে যাই হোক ক্ষেতের আইল দিয়ে বাড়িতে যেতে পারলেও বৃষ্টি বাদলের সময় সম্পূর্ণ ভরে যায়। যার কারণে তারা এখানে থাকতে পারেনা, বাড়ি পেয়েও মানুষের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে তাদেরকে।"
স্থানীয় এলাকাবাসী ইসমাইল হোসেন বলেন, "সরকার এখানে বাড়ি করে দিয়েছে লোকজনের থাকার জন্য। সে বাড়ি ফাকা পড়ে রয়েছে মাঠের মধ্যে এখন সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল হয়েছে। বাহির থেকে ছেলে-পেলেরা আসে এখানে মদ-গাঁজা খায়, দিন রাত সমানে চলে সেই কাজ।"
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, "দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী দুর্যোগ সহনীয় বেশ কিছু ঘর সারাদেশের ন্যায় হাকিমপুর উপজেলাতে নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তা উপকারভোগীদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। আমি আমার কর্মকালীন সময়ে এসে ইতোমধ্যে দুএকটি ঘর ভিজিট করে দেখেছি। দু'একটি ঘরে যাতায়াতের রাস্তা নিয়ে একটু সমস্যা রয়েছে উপকারভোগীগন যেটি বলেছেন। আসলে আমরা সেসময় মূলত যাদের আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতেই মূলত ঘরগুলো বিতরণ করা হয়েছে, যার হয়তোবা ওই জায়গাটি ছাড়া আর কোন জায়গা ছিলনা। উপকারভোগীরা এখন বিশেষ করে বর্ষার সময় যাতায়াতের সমস্যায় পড়েছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও মেয়রের সাথে কথা বলে তাদের বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে টিআর কাবিখা এর মাধ্যমে তাদের যাতায়াতের রাস্তা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"