ফলের ওপর মাছি বসছে? জেনে নিন মাছি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়
রান্নাঘরে ঢুকেই দেখলেন আপনার ফলের বোলের ওপর একঝাঁক মাছি উড়ে বেড়াচ্ছে; ওই মুহূর্তে নিশ্চয়ই বিরক্তির সীমা থাকে না? আপাতদৃষ্টিতে এগুলো শুধুমাত্র বিরক্তির কারণ হলেও, মাছি তাড়ানোর উপায় না জানলে এগুলো স্বাস্থ্যের জন্যও চরম ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ একটি স্ত্রী মাছি একবারেই প্রায় ৫০০ ডিম পাড়তে পারে ফলের ওপর! সে কারণেই এই ক্ষুদ্র জীবগুলোও অনেক সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এক টুকরো ফল বাজার থেকে ঘরে আনার সময়ই হয়তো এতে দুয়েকটি ডিম থাকতে পারে এবং জীবাণুর আক্রমণ শুরু হয়ে যেতে পারে। তাই ঘর থেকে ফলের মাছি তাড়ানোর উপায় জেনে রাখাটা অবশ্যই গুরুত্বপুর্ণ।
ফলের মাছি কী এবং কেন এগুলো ঘরে আসে?
বাদামিরঙা ও লাল চোখের ছোট ছোট মাছিগুলোই হলো ফ্রুট ফ্লাই বা ফলের মাছি। রসালো বা পঁচতে থাকা ফলের দিকে এসব মাছির আকর্ষণ বেশি, সে কারণেই বেশিরভাগ সময় রান্নাঘরেই মাছি ভনভন করতে দেখা যায়। তাই রান্নাঘরে কোনো জিনিস রাখার আগে ভাবতে হবে এগুলো মাছিকে আকর্ষণ করবে কিনা। বলে রাখা ভালো, এসব মাছি খুব দ্রুত প্রজনন ঘটায় এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দুদিনের মধ্যেই এরা আবার প্রজননে সক্ষম হয়ে ওঠে। তাই রান্নাঘরে দুয়েকটা ফলের মাছি দেখলে একে হালকাভাবে নেওয়ার উপায় নেই; বরং সাথেসাথেই এগুলো দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফলের মাছি ও ডাঁশ মাছির মধ্যে পার্থক্য
আকার-আকৃতিতে ও দেখতে একই রকম হলেও ফলের মাছি এবং ডাঁশমাছির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ফাঙ্গাস ডাঁশমাছিকে অনেকেই ফলের মাছি বলে ভুল করেন। কিন্তু এগুলো আসে মূলত হাউজপ্ল্যান্ট থেকে, ফলের বোলের আকর্ষণে নয়। এই মাছিগুলো আবার পঁচতে থাকা গাছের কাছে উড়ে বেড়ায়; অন্যদিকে ফলের মাছি সাধারণত মিষ্টি জিনিসের দিকে আকর্ষিত হয়। তবে সৌভাগ্যবশত, দুই ধরনের মাছি তাড়ানোর উপায়ই প্রায় কাছাকাছি এবং এগুলো প্রয়োগ করলে আর এসব মাছি ঘরে উৎপাত করতে পারবে না।
কিভাবে ফলের মাছি চিরতরে বিদায় করবেন?
প্রথমত, আপদ আসার আগে তাকে রুখে দেওয়ার পরিকল্পনা রাখা ভালো। দোকানে ফল কিনতে গিয়ে যদি দেখেন ফলের ওপর মাছি উড়ে বেড়াচ্ছে, হয়তোবা সাইট্রাসযুক্ত কোনো ফলের ওপর। তবে ফলের ওপর মাছি না থাকলেই যে সেই ফলে মাছি ডিম পাড়েনি তা কিন্তু নয়।
তাই ফল কিনে ঘরে আনার সাথেসাথেই হোয়াইট ভিনেগার সল্যুশন দিয়ে ফলগুলো ধুয়ে ফেলতে পারেন কিংবা ওয়াশিং স্প্রে করতে পারেন যেগুলো মাছির ডিম সরিয়ে ফেলবে। সেই সঙ্গে রান্নাঘর তেল-চর্বি ও স্যাঁতসেঁতে আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে। ময়লা ফেলার ঝুড়ি বা বাক্স অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে এবং পঁচা ফল-সবজি বা এগুলোর খোসা ফেললে তা মাঝেমধ্যেই পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
সিংকের নিচ দিয়ে ময়লা যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে দেখতে হবে সেই জায়গা দিয়ে ময়লা ঠিকমতো পাস হচ্ছে কিনা এবং পানি ও খাবারের ময়লা অবশিষ্টাংশ যেন জমে না থাকে।
ফলের মাছি দূর করার উপায়সমূহ
ফলের মাছি বা ডাঁশমাছি দূর করার অনেক উপায় রয়েছে। মাছি ধরার ফাঁদ কিনে তা পেতে রাখা যায় বা নিজেই বানিয়ে নেওয়া যায়। ঘরে বানিয়ে নেওয়াই বরং বেশ সহজ। একটা ছোট জারে সাইডার ভিনেগার ভরে তা প্লাস্টিক র্যাপ দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে এবং উপরে কিছু ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে, যাতে করে ওই ছিদ্রগুলো দিয়ে মাছি ঢুকতে পারে। মাছি ঢোকার সাথেসাথেই এগুলো ভিনেগারে ডুবে মারা যাবে। সাইডার ভিনেগার না থাকলে একটা ছোট বোলে হোয়াইট ভিনেগার ঢেলে এর ওপর কয়েক ফোটা ডিশওয়াশিং লিকুইড দিলেই একটা নিখুঁত ফাঁদ তৈরি হয়ে যাবে।
অথবা তলার দিকে পঁচতে শুরু করেছে এমন এক টুকরো ফল একটা জারে রেখে এতে ভিনেগার ঢেলে রাখতে পারেন। একটা পেপার কোন বানিয়ে জারের মুখে রেখে দিতে হবে। ফলের টানে এই ছিদ্র দিয়ে মাছি জারের ভেতর ঢুকে যাবে এবং সেখানেই আটকে যাবে।
ব্লিচ দিয়ে কি ফলের মাছি দূর করা যায়?
ক্ষুদ্র জীবাণু দূর করতে ব্লিচ খুবই কার্যকরী হলেও, ফলের মাছি দূর করার ক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত পদ্ধতিগুলোর চেয়ে ব্লিচ কম কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর যেহেতু এটি একটি কড়া কেমিকেল, তাই খাবারের সংস্পর্শে আনা উচিত নয়। আবার ড্রেনের মধ্যে ফলের মাছি উড়তে দেখে যদি ব্লিচ করে দেওয়ার কথা ভাবেন, সেটিও ঠিক কার্যকরী হবে না। কারণ ব্লিচ করলে কিছু মাছির ডিম হয়তো মরে যাবে, কিন্তু ব্লিচ আসলে ড্রেনের মধ্যে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারবে না। আর যেহেতু একটা মাছি পাঁচশোর মতো ডিম পাড়তে পারে একবারে, তাই এগুলো দূর করতে সবচেয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপই নেওয়া উচিত।
শেষ কথা
রান্নাঘরে বা খাবার ঘরে আশেপাশে মাছি উড়তে দেখাটা অবশ্যই বড় বিরক্তির কারণ। কিন্তু আপনি যদি রান্নাঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন, তাহলে মাছিও কম আসবে। আর যদি মাছির যন্ত্রণার ভুক্তভোগী হয়েই থাকেন, তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সূত্র: ইটিংওয়েল