লন্ডনের রাস্তায় নারীদের আক্রমণ করা ১৮ শতকের এক অপরাধীর গল্প
১৭৮৮ থেকে ১৭৯০ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডের সংবাদপত্রগুলোতে এক চাঞ্চল্যকর খবর নিয়মিত জায়গা করে নিতে শুরু করলো। লন্ডনের রাস্তায় নাকি একটি 'দানব' ঘুরে বেড়াচ্ছে; রহস্যময় এক অপরাধী আচমকা কোনো নারীর উরু বা নিতম্বে ছুরি, পিন ইত্যাদি ধারালো বস্তু দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যেত।
কখনোবা কোনো নারীকে ছোট একগোছা ফুল শোঁকার আহ্বান জানাতো সে। এরপর সুযোগ বুঝে সেই ফুলের গোছায় লুকানো অস্ত্র দিয়ে ওই নারীকে আঘাত করতো। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এ অপরাধীর নাম গণমাধ্যমের কাছে হয়ে গেল 'দ্য মনস্টার'।
সময়ের সাথে সাথে তার আক্রমণের পরিমাণ বাড়তে থাকলেও লন্ডন প্রশাসন এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা পেল না। এদিকে নিয়মিত গণমাধ্যমের চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশে শেষ পর্যন্ত এ গোপন অপরাধী চরিত্রটি জনমনে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠলো।
লন্ডনের বাসিন্দা সারা সোফিয়া ব্যাংকস এ অপরাধীকে নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। তিনি এ অপরাধী সংক্রান্ত সংবাদের কাটিং, প্রিন্ট, পোস্টার, বিজ্ঞপ্তি সংগ্রহ করা শুরু করলেন।
এদিকে লন্ডনের গণমাধ্যমগুলো প্রতিটি অপরাধের পর তার রগরগে বর্ণনা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে শুরু করলো। এমনকি এসব খবরে দাবি করা হতে শুরু হলো যে অপরাধীটি স্থানীয় কেউ নয়, বরং বিদেশি। তবে তাদের কাছে এ নিয়ে কোনো প্রমাণ ছিল না।
দানবের সন্ধানে
আতঙ্কিত লন্ডনবাসী রাতবিরাতে দলবেঁধে শহরের রাস্তায় পাহারা দিতে শুরু করলো। ধনী ব্যবসায়ী ও বণিকেরা অপরাধী ধরার জন্য মোটা অংকের অর্থ পুরস্কারে ঘোষণা দিলেন। লন্ডনের দেয়ালগুলো ছেয়ে গেলে এক 'রক্তপিপাসু' দানবের সন্ধানে লাগানো পোস্টারে। অনেকে আবার ধারণা করলেন এ অপরাধগুলো কোনো একক ব্যক্তির কাজ নয়।
লন্ডনের পুলিশ বাহিনী, দ্য বাও স্ট্রিট রানার্স, তাদের অপরাধী ধরার চেষ্টার অংশ হিসেবে নিজেরা লাল পোস্টার ছাপাতে শুরু করলো। সেসব পোস্টারে বাড়ির ভৃত্য ও ধোপানিদের বলা হলো তাদের মালিকদের ওপর নজর রাখতে, মালিকদের রুমালে রক্তের দাগ আছে কিনা তা খেয়াল করতে।
অবশেষে সফলতা দেখা গেল। ১৭৯০ সালে দ্য বাও স্ট্রিট রানার্স একজনকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হলো।
গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত
যাকে গ্রেপ্তার করা হলো তার নাম রাইনিক উইলিয়ামস, ওয়েলসের বাসিন্দা এক বেকার তরুণ। তার গ্রেপ্তার পর তাকে গণপিটুনি দিতে চেয়েছিল উত্তেজিত জনতা। শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলো কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত উইলিয়ামসকে ছয় বছরের জন্য নিউগেট কারাগারে পাঠনো হয়।
যদিও উইলিয়ামসের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রমাণ ছিল না, তবে তার বিচারের পর ওই আক্রমণগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আজও ইতিহাসবিদেরা স্পষ্ট জানেন না রাইনিক উইলিয়ামসই প্রকৃত অপরাধী ছিলেন কিনা। ওই আক্রমণকারীর বর্ণনা যা জানা গিয়েছিল, সেগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির মিল ছিল না। আর একটি আক্রমণের জন্য উইলিয়াসের অ্যালিবাইও ছিল।
অনেক ইতিহাসবিদ এটাও মনে করেন, বাস্তবে এ ধরনের কোনো অপরাধী কখনো ছিল না। বরং পুরো ব্যাপারটি ছিল এক ধরনের মাস হিস্টিরিয়া।
- স্ক্রল ডটকম থেকে অনূদিত