ভুঁড়ি কমানোর ১০ উপায়
ওজন কমিয়ে একটা ছিপছিপে পাতলা, মেদহীন শরীর পাওয়ার জন্য আমরা কত কি না করি! কিন্তু শত রকম ডায়েট চার্ট অনুসরণ করার পরেও পেটের মেদ যেন কমতেই চায় না। তখন মনে হয় এর চাইতে বড় চ্যালেঞ্জ এ জগতে আর কিছুই নেই! কিন্তু তার জন্য হাল ছেড়ে দেওয়ার মানে হয় না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনি পেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য। আজ পাঠকের জন্য থাকছে তেমনই ১০টি টিপস।
১. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা
তলপেটের মেদ কমানোর সবচেয়ে দ্রুততম উপায় হলো উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এসব খাদ্যের মধ্যে রয়েছে ঘাস খাওয়ানো হয় এমন গরুর মাংস, স্যালমন মাছ, মাখন এবং অলিভ অয়েল ইত্যাদি। কারণ প্রোটিন ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবারের দিকে যদি আপনার মনোযোগ বেশি থাকে, তাহলে মিষ্টিজাতীয় খাবারের দিকে আকর্ষণ কমে যাবে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা স্থিতিশীল রাখবে। তবে নিজের দেহকে খাদ্য বিপাক প্রক্রিয়ার জন্যও সময় দিতে হবে এবং দুই খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ফ্যাট ঝরাতে হবে।
২. প্রচুর পানি পান করা
সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজন প্রচুর পানি। কিন্তু আপনি জেনে হয়তো অবাক হবেন, পানি আমাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। স্বাস্থ্য বিষয়ক কোচ ভার্জিনিয়া গ্রুলার বলেন, "পানি আমাদের ক্ষুধাভাব নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরকে শক্তি দেয়। মেটাবলিজম ও হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে।"
৩. নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা
দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের যেসব ক্ষতি করে, তার মধ্যে একটি হলো এটি আমাদের ওজনও বাড়িয়ে তোলে। গ্রুলারের মতে, দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তাগ্রস্ততার ফলে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায় যা ইনসুলিনের মাত্রাও বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তে সুগারের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। উচ্চমাত্রায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে চিনিজাতীয় ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। তাই বই পড়া, হাটাহাটি, জার্নালিং কিংবা শরীরচর্চার অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৪. শুধু পেট নয়, পুরো শরীরের দিকেই মনোযোগ দেওয়া
শরীরের শুধুমাত্র একটি অংশের মেদ কমানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে পুরো শরীরের প্রতিই মনোযোগ দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক রবারট হার্বস্ট বলেন, "পেটের মেদ কমানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে পুরো শরীরের চর্বি কমানো। শরীরের ফ্যাট কমে গেলেই আস্তে আস্তে পেটের মেদ কমতে থাকবে। ওজন অনুশীলনের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের মেটাবলিজম বাড়িয়ে তুলতে হবে। এটি পেশীকে সচল করে যা ক্যালরি ঝরাতে সাহায্য করে এবং আপনাকে ফিট ও শক্তিশালী রাখে।"
৫. ক্ষুধা অনুভব
সনদপ্রাপ্ত লেভেল টু ক্রসফিট কোচ জেক জ্যাকসনের ভাষ্যে, আমাদের সারাক্ষণ পেট ভরা রাখার প্রয়োজন নেই। সারাদিন একটু ক্ষুধাভাব থাকাটা মন্দ নয়। আপনার যদি খুব বেশি ক্ষুধার্ত অনুভব হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি খুব সামান্য খেয়েছেন। আর যদি সামান্য ক্ষুধার্ত হন, তাহলে কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। নাচ, সাইক্লিং বা ট্রেকিং এর মতো কাজের মাধ্যমেও ক্যালরি ঝরানো সম্ভব।
৬. ওজন পরিমাপ করা
একটি নির্দিষ্ট সময় বিরতির পরপর নিজের ওজন পরিমাপ করুক। জ্যাকসনের ভাষ্যে, "গবেষণা বলে, প্রতি সপ্তাহে আপনার শরীরের মোট ওজনের -৫ দশমিক ১ শতাংশ ওজন কমা উচিত। এর চেয়ে বেশি ওজন কমে গেলে বুঝে নিতে হবে আপনার পেশী ক্ষয় হচ্ছে এবং ডায়েট প্রক্রিয়া নষ্ট হচ্ছে। পেটের মেদ কমানো একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই ধৈর্য ধরে নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।"
৭. চিনি খাওয়া বন্ধ
আমরা সবাই জানি চিনি আমাদের শরীরের জন্য ভালো উপাদান নয়, কিন্তু এটি আমাদের তলপেটের মেদ কমাতে পারে। ডা ব্রিয়ান গ্রিফিন ব্যাখ্যা করেন, "আমাদের তলপেটে দুই ধরনের ফ্যাট থাকে, অভ্যন্তরীণ ফ্যাট এবং ত্বকনিম্নস্থ ফ্যাট। এই দুটি ফ্যাট কমানোর জন্যই বাড়তি চিনি ও অ্যালকোহল গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ বাড়তি চিনি খেলে আমাদের শরীর সুগারের মাত্রা কমানোর জন্য ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই সুগার তখন যকৃতে গিয়ে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত হয় যা অবশেষে ফ্যাট হিসেবে জমা হয়।
৮. নিয়মিত ব্যায়াম
বাংলায় একটি প্রবাদই আছে- 'কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।' মেদভূড়ি কিংবা ওজন কমানোর যাত্রাও ঠিক তেমনই। পেটের মেদ কমাতে চাইলে পেটের ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন একাধিক স্বাস্থ্যবিদ। ব্যায়াম করলে ত্বকনিম্নস্থ চর্বি কমে যায়, অন্যদিকে ডায়েটের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চর্বি কমতে থাকে।
৯. ঘুম জরুরি
রাতে ভালো ঘুম শরীর-মনকে ভালো রাখে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে বলে জানিয়েছেন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান ক্যাথেরিন জনস্টোন। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে পেটে মেদ জমতে পারে। দৈনিক ৭-৯ ঘন্টা না ঘুমালে দিনের বেলা উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়, বিশেষত কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার যা দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তাছাড়া দীর্ঘদিন যাবত ঘুম কম হতে থাকলে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই ঘুমের রুটিন ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ কাজে আপনি চাইলে ফিটনেস ট্র্যাকারের সাহায্য নিতে পারেন।
১০. হাঁটাহাঁটি করা
শরীরের বাড়তি ক্যালরি ঝরানোর জন্য হাঁটাহাঁটি করা যে একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম তা কে না জানে! তাছাড়া, হাঁটলে দুশ্চিন্তা কমে।
সূত্র: ইট দিস, নট দ্যাট
(ছবি: শাটারস্টক)