ভিডিও গেম এই লোককে নতুন জীবন দিয়েছে
১৮ বছর বয়সেই রায়ান হার্ট বাস্তুহারায় পরিণত হন। লন্ডনের রাস্তাই হয়ে ওঠে তার ঠিকানা। বাড়ির মালিকের সঙ্গে বিরোধের কারণে লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর ক্রয়ডনের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের শিকার হয় তার পরিবার।
এখন, ২০ বছর পর সেই হার্ট বিশ্বখ্যাত, মাল্টি মিলিওনিয়ার গেমার। কয়েকশ চ্যাম্পিয়নশিপসহ গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের বেশ কয়েকটি এখন তার দখলে।
তিনি মনে করেন, ভিডিও গেম তাকে জীবনের কঠিন সময় মোকাবেলা করতে সাহায্য করেছে; ভিডিও গেমই তার কাছে হয়ে উঠেছিল আশ্রয়।
১৯৮৯ সালে, মাত্র ১০ বছর বয়সে প্রথম অ্যামিউজমেন্ট আর্কেডে পা রাখেন হার্ট৷ তার মা তাকে সেগা গেম গোল্ডেন অ্যাক্স খেলার জন্য খুচরা কিছু পয়সা দিয়েছিলেন।
'খুব পরিস্কার এই খেলার নিয়ম,' হার্টের শুরুর দিককার কথা, 'নিজে পরাজিত না হয়ে যত খুশি দুষ্ট লোককে খতম করো!'
ওই শুরু। দ্রুতই, একেবারে তৎক্ষণাৎই এই গেম গেঁথে ফেলল হার্টকে। তিনি আবিস্কার করলেন, ভিডিও গেমে তার সহজাত প্রতিভা রয়েছে।
বেশি দিন অপেক্ষা করতে হলো না। পাঁচ বছরের মধ্যেই, লন্ডনের পিকাডেলি সার্কাসের বিখ্যাত বিনোদন কেন্দ্র ট্রোকাডেরো সেন্টারে এক টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ মিলে গেল তার। সেই ১৭ বছর বয়সে হার্ট প্রথম জাতীয় খেতাব জিতে নিলেন।
তার গেমিং জীবনের প্রথম দিকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। তিনি বলেন, 'টুর্নামেন্টের আগের রাতেও আমার চিন্তা থাকত রাতে কোথায় ঘুমাব। এমনও সময় ছিল, যখন পরের বেলায় খাবার কীভাবে জুটবে- জানা ছিল না। '
এসব ব্যাপার, দুশ্চিন্তা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। অনেক দিন হতাশায় কেটেছে। ওই সময়ে, তার সমস্যাজর্জর জীবনে আরকেইড-ই ছিল ঘরবাড়ি, আশ্রয়স্থল, এবং স্বস্তির জায়গা। গেমিং-ই তার জীবনের ওই কঠিন সময়ে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
গেমিংয়ের সহজাত প্রতিভা তাকে আরও অনেক সুযোগও এনে দেয় পরে। ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথম দেশের বাইরে, জাপানে টুর্নামেন্ট খেলার আমন্ত্রণ পান। জাপানি কোম্পানি নামকোর 'টেক্কেন থ্রি' ও এসএনকে'র 'কিং অফ ফাইটার' গেমের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন হার্ট। অংশ নিয়েই টোকিও থেকে প্রথম আন্তর্জাতিক খেতাব জেতে নেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। জীবন পাল্টে যেতে শুরু করে হার্টের।
বিশ্বজুড়ে ৪০০টির বেশি গেমিং ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন তিনি। এক পর্যায়ে গেমিং জগতে তাকে 'রোবটনিক', 'প্রোডিজাল সান', 'দ্য টার্মিনেটর' ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা শুরু করে লোকজন। টুইচ নামের স্ট্রিমিং সাইটে এখন তার ফলোয়ার ৫ হাজারেরও বেশি ।
কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে হার্ট জানান, সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন অন্তত আট ঘণ্টা সময় ধরে অনুশীলন করেন তিনি। 'অনেকেই আমার এ ব্যাপারকে আসক্তি বলতে পারেন, কিন্তু এটিই আমার জীবিকা। তবে, গেমিংয়ে কখন বিরতি নিতে হবে, এটি বোঝা জরুরি। অতিরিক্ত আসক্তি মানুষের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।'
হর্টের গেমিং ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়ে গেমিংয়েরও অনেক উন্নতি হয়েছে। গ্রিন ম্যান গেমিংয়ের এক গবেষণা বলছে, টুর্নামেন্টগুলোতে দর্শকসংখ্যা ৪০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবার পর গত এক বছরে আয়ও বেড়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে চলে গেছে।
প্রতিযোগীদের পুরস্কারের অঙ্কও বেড়েছে। গ্রিন ম্যান গেমিংয়ের ওই প্রতিবেদন আরও জানাচ্ছে, ২০০০ সালে বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিযোগী ৭ লাখ মার্কিন ডলারের মতো জিতে নেন। গত বছর এই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ১৭৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
রায়ান হার্ট মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, বিশেষত তার মতো মানুষদের জন্য ভিডিও গেম মুক্তি ও স্বস্তির জায়গা। এই গেম দিয়েই নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, নতুন নতুন দেশে ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়।
হার্টের কথা, 'ইতোপূর্বে কোনো কিছুর সঙ্গেই খাপ খাওয়াতে পারেনি, এমন মানুষদের জন্য গেমিং একটি স্বস্তি ও স্বচ্ছন্দের জায়গা।'
- সূত্র: সিএনএন