ছবির গল্প: যে পরিবারে মানবশিশু নয়, পুতুলই ‘দত্তক’ সন্তান
ইরানের কিছু পরিবারে দত্তক সন্তান হিসেবে মানবশিশু নয়, বরং মানুষের মতো দেখতে পুতুলের চাহিদা বেড়েছে।
মানবসদৃশ এই পুতুলগুলো হয়ে উঠছে ওইসব পরিবারের আনন্দের নতুন উৎস। মানবশিশুর মতোই আদর-স্নেহ জুটছে ওদের কপালে!
এমন কিছু ছবি ও সেগুলোর নেপথ্য গল্প নিয়ে এ আয়োজন:
শখ থেকে শুরু
আরও বেশি সন্তান থাকলে ভালো হতো- এমন অনুভবকারী কিছু ইরানি পরিবারের জন্য হাইপার-রিয়েলিস্টিক বেবি ডল বানান ২৪ বছর বয়সী মরিয়ম আগায়ি। 'কাজটি আমি তিন-চার মাস হলো, শুরু করেছি,' বলেন তিনি।
মরিয়ম আরও বলেন, 'দ্বিতীয় পুতুলটি বানানোর পর একের পর এক অর্ডার পাচ্ছি। দ্বিতীয়টি প্রথম পুতুলের চেয়ে অনেক বেশি বাস্তবানুগ ছিল। সেটি বানানোর পর বলেছিলাম, এখন থেকে খদ্দেরদের কাছ থেকে অর্ডার নিতে পারব।'
'শুরুতে এটিকে ব্যবসা হিসেবে ভাবিনি; কেননা, এ আমার শখ। তবে দ্বিতীয় পুতুলের পরে এ ধরনের পুতুলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। খদ্দেররা এমন পুতুল চান।'
শোক লাঘবে ভূমিকা
যে মা সন্তান হারিয়েছেন, তার শোক লাঘবে এই পুতুলের ব্যবহার সম্ভব। কিংবা মোজাগন জাবিপুরের বেলায় যেমনটা ঘটেছে, নিজের ৫ বছর বয়সী মেয়েকে সঙ্গ দিতে এমন পুতুল ঘরে এনেছেন তিনি।
খেলার সঙ্গী
জাবিপুরের মেয়ে বারান এই পুতুলের সঙ্গে খেলাধুলা করে। ঘুমোনোর সময় পুতুলটিকে আদর করে জড়িয়ে রাখে সে।
আবদারের দাম
জাবিপুর বলেন, আরেকটা ভাই বা বোনের জন্য বারানের বারবার আকুতি-মিনতির কারণেই পুতুলটি ঘরে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি ও তার স্বামী।
অনুভূতির প্রত্যাবর্তন
'পুতুলটিকে কোলে নিলে ঠিক সেই অনুভূতি হয়, যে অনুভূতি আমার নিজের সন্তানটি এমন পিচ্চি থাকাকালে হতো,' বলেন জাবিপুর। আরও বলেন, 'আজকের দিনে পরিবারগুলো তিন-চারটি সন্তান নেওয়ার কথা ভাবতেও পারে না।'
মুখের আদল
শুরুতে শখ থেকে এ ধরনের পুতুল বানানো শুরু করলেও, সিলিকন শিশুর মুখ সযত্নে রঙিন করে এবং এটিকে পোশাক পরিয়ে দেখতে যতটা সম্ভব সত্যিকারের মানবশিশুর মতো করে তোলার প্রচেষ্টা ছিল মরিয়মের। সেটি তিনি যথেষ্ট ভালোভাবেই পেরেছেন। তাই চাহিদা বেড়েছে তার তৈরি পুতুলের।
সান্ত্বনার চাবি
'যেসব পরিবারে একটাই মাত্র সন্তান, সেই শিশু আরও অন্তত একটি ভাই কিংবা বোনের জন্য স্বভাবতই বাবা-মায়ের কাছে আবদার করে। সেই বাবা-মা সন্তানের অভিযোগ ও প্যানপ্যান থামাতে এই পুতুল ঘরে নিতে চান,' বলেন মরিয়ম।
বিকল্পের দায়
ইরানে অর্থনৈতিক সংযমের কারণে একাধিক সন্তান নিতে অনিচ্ছুক অনেক পরিবারের কাছে এই পুতুলশিশুর চাহিদা অনেক। 'খরচ কমাতে ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই অনেক পরিবার একাধিক সন্তান নেন না। কিন্তু তারা বুঝতে চান না, পুতুলশিশু কোনোভাবেই প্রকৃত মানবসন্তানের বিকল্প হতে পারবে না,' অভিমত মরিয়মের।
সামাজিক ভার
রাজধানী তেহরানে, নিজের বাড়িতে পুতুলশিশুর সঙ্গে খেলা করছেন জাবিপুর ও তার সন্তান। একটিমাত্র সন্তান নেওয়ার 'অন্যতম প্রধান কারণ- অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সন্তান গ্রহণের ব্যয়বহুল খরচ', বলেন তিনি।
জাবিপুর আরও বলেন, 'সামাজিকভাবে এক সন্তানের পরিবারকে এক ধরনের মর্যাদার চোখে দেখা হয়। একাধিক বা বহু সন্তানকে দেখা হয় সেকেলে ব্যাপার হিসেবে। আজকাল তো কোনো পরিবারই তিন-চারটি সন্তান নেওয়ার কথা ভাবতে পারে না।'
হীতে বিপরীত?
সরকারি তথ্য-উপাত্তের সূত্র ধরে ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ মাসে বলেছেন, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো দেশে পরিণত হবে। এর আগে, জুলাইয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, জনসংখ্যা এভাবে কমতে থাকলে ইরান 'অন্যান্য দেশের পেছনে পড়ে যাবে'।
- সূত্র: রয়টার্স