সিলেটে সাকিব-তামিমের সঙ্গে বিসিবির বিশেষ কমিটির বৈঠক
গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের। আগের সব বিশ্বকাপের সাফল্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাওয়া দলটিই বন্দী থাকে ব্যর্থতার বৃত্তে। প্রত্যাশার ফল মেলেনি, সঙ্গী হয় রাশি রাশি হতাশা। কী কারণে এমন ব্যর্থতা, কারণ খতিয়ে দেখতে গত নভেম্বরে তিন সদস্যের বিশেষ কমিটি গঠন করে বিসিবি। সিলেটে আজ সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন বিশেষ কমিটির সদস্যরা।
আলোচনা গতিশীল ছিল বলে জানান এই কমিটির প্রধান ও বিসিবি পরিচালক এনায়েত হোসেন সিরাজ। তবে সেটা ফলপ্রসূ কিনা, সে ব্যাপারে এখনই মন্তব্য করতে চান না তিনি। বাকি দুই সদস্য বিসিবি পরিচালক মাহবুবুল আনাম ও আকরাম খানকে নিয়ে দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে আলোচনার পর এসব জানান এনায়েত হোসেন।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখতে ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফসহ দলের প্রায় সবার সঙ্গেই কথা বলেছে বিসিবির বিশেষ কমিটি। বাকি ছিলেন কেবল সাকিব ও তামিম। এ দুজনের বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হচ্ছিল না বিশেষ কমিটির। এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বিপিএলে আজ ম্যাচ ছিল না বলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে সিলেট যান কমিটির সদস্যরা।
তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব, বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বে খেলেছে বাংলাদেশ। ব্যর্থতার কারণ উদঘাটনে অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তামিমের সঙ্গেও একই আলোচনায় বসে কমিটি, অথচ অভিজ্ঞ এই ওপেনার বিশ্বকাপ দলেই ছিলেন না। দল ঘোষণার দুদিন আগে নানা ঘটনার জেরে বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তামিম। তবু তামিমের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন কমিটির সদস্যরা।
সাকিব ও তামিমের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে বিসিবির বিশেষ কমিটি। বৈঠক শেষে ঢাকা ফেরার আগে এনায়েত হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'সাকিব-তামিম দুজনের সঙ্গে আমরা আলাদাভাবে কথা বলেছি। তবে এটা সংবাদমাধ্যমে বলার মতো নয়। কারণ এটা খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে করা হয়েছে। যখন সময় আসবে, আপনারা দেখতে পাবেন। জনগণও দেখতে পাবে।'
সাকিব-তামিমের সঙ্গে হওয়া 'গতিশীল' আলোচনার প্রতিবেদন বোর্ডে জমা দেবে বিশেষ কমিটি। বর্ষিয়ান এই সংগঠক আরও বলেন, 'আমি মনে করি আলোচনা গতিশীল হয়েছে। ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা, এই মুহূর্তে বলতে পারব না। আমি বললাম, আলোচনা গতিশীল হয়েছে। দুজনকে নিয়ে আলাদা আলাদা বসেছিলাম। আমরা আমাদের প্রতিবেদন বোর্ডে জমা দিয়ে দেব।'
বিশ্বকাপের আগে একটি ভিডিওতে দলে না থাকার না ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন তামিম। সেদিনই একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয়ে তামিমের চরম সমালোচনা করেন সাকিব। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পেছনে এসব ঘটনার প্রভাব আছে কিনা, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা ছিল দেশের ক্রিকেটে। বিশ্বকাপ চলাকালীনই ওঠে প্রশ্ন। এক প্রশ্নের উত্তরে সাকিব বলেছিলেন, প্রভাব পড়তেও পারে।
বাংলাদেশ দলের তারকা এই দুই ক্রিকেটারের সম্পর্ক ভালো নয়। ব্যক্তিগত কারণে দীর্ঘদিন কথাবার্তা বন্ধ তাদের। তবে এ দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপারটি আলোচনায় তোলেনি বিসিবির বিশেষ কমিটি। এনায়েত হোসেন বলেন, 'যেটাকে (সাকিব-তামিমের) দ্বন্দ্ব বলছেন, আমরা সেটাকে বিবেচনায় আনছি না। পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু হয়। স্থায়ী কিছু না এটা।'
'পৃথিবীর সব কিছুই সমাধানযোগ্য, যদি সমাধান করতে চান এবং সমাধান করতে জানেন। আসলে সার্বিক চিত্র এখানে আছে। শুধু সাকিব-তামিমের বিষয় নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আমরা ভবিষ্যতে কীভাবে পরিচালনা করতে পারি... ওদের কাছেও আমরা কিছু পরামর্শ চেয়েছি, ওরা দিয়েছে। আমরাও ওদের সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করেছি। তাদের সুবিধা-অসুবিধা সব কিছু আলোচনা হয়েছে।' যোগ করেন তিনি।