বাংলাদেশের অনুশীলনে ভারতীয় চায়নাম্যান বোলার
আশেপাশে কয়েকজন লেগ স্পিনার আছেন, তবে তাদের কেউ-ই জাতীয় দলে নিয়মিত নন। বাংলাদেশ দলে লিগ স্পিনার রীতিমতো ধুমকেতু, হঠাৎ দেখা দিয়েই হাওয়া! সেখানে চায়নাম্যান বা রিস্ট স্পিনার অনেকটা কল্পনার মতো। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলে তো আছে এমন স্পিনার, যাদের সামলাতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। প্রস্তুতি সারতে তাই ভারতীয় রিস্ট স্পিনারকে নিয়ে আসা হয়েছে বাংলাদেশের অনুশীলনে।
কারাপাক জিয়াস, নামটা পরিচিত মনে হতে পারে। না, কেরালা রাজ্যের এই ক্রিকেটার বিখ্যাত কেউ নন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে ডাক পেয়েছিলেন, কিন্তু খেলা হয়নি কোনো ম্যাচ। তার ক্যারিয়ারে উল্লেখতম ঘটনা এটাই। তবু এই ক্রিকেটার বাংলাদেশের ক্রিকেট দলে অতি পরিচিত মুখ। নেটে তার বিপক্ষে খেলে আগেও প্রস্তুতি নিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
ভারতীয় এই রিস্ট স্পিনার সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন। দেশটিতে কোনো দল ক্যাম্প করলে বিভিন্ন সময়ে তার ডাক পড়ে। চায়নাম্যান বোলার হওয়ায় এই সুযোগটা মেলে তার। আগে থেকেই জিয়াসকে চেনায় গত বছর আরব আমিরাতে এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশের অনুশীলনে তাকে যুক্ত করেন টি-টোয়েন্টি দলের সাবেক কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম।
গত বছর বাংলাদেশের অনুশীলনে নেট বোলার হিসেবে লম্বা সময় ধরে দেখা গেছে জিয়াসকে। কেবল এশিয়া কাপেই নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াতেও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় এই স্পিনার। শ্রীরাম বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়ার পর জিয়াসকে দলের সঙ্গে আর দেখা যায়নি। এবার এশিয়া কাপের আগেও তাকে ডেকে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশের স্কিল ক্যাম্পে যোগ দেওয়া জিয়াস মিরপুরের একাডেমি ভবনে থাকছেন। বাংলাদেশ দল যতোদিন তাকে চায়, ততোদিন তিনি অনুশীলনে থাকবেন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব তথ্য দিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক ও সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস।
তিনি বলেন, 'এশিয়া কাপের আগে প্রস্তুতিতে সে সাহায্য করবে। গত এশিয়া কাপেও আমাদের দলের সঙ্গে সে ছিল। ভারতীয় ক্রিকেটার, চায়নাম্যান বোলার। সে আরব আমিরাতে থাকে। দুবাইতে যখন বিভিন্ন দলের ক্যাম্প হয়, তখন সে গিয়ে বোলিং করে। গত বছর এশিয়া কাপের আগে আমাদের দলের সঙ্গে ছিল। এবার এশিয়া কাপের আগেও আছে। বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতিতে যতোদিন থাকতে হয়, সে থাকবে।'
জিয়াসকে বেশ আগে থেকেই চেনেন শ্রীরাম। ২০১৭ সালে ভারতীয় এই রিস্ট স্পিনারকে অস্ট্রেলিয়ার নেটে ডাকেন তিনি, শ্রীরাম তখন অজিদের স্পিন বোলিং কোচ। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে দলটির রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব ও জুজবেন্দ্র চাহালকে সামলানোর প্রস্তুতি হিসেবে জিয়াসের বিপক্ষে ব্যাটিং অনুশীলন করেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জিয়াসকে বাংলাদেশের নেটে ডাকেন শ্রীরাম। জিয়াসের কথা প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের কম্পিউটার অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন। এ কারণে তাকে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে চেয়েছেন হাথুরুসিংহে। প্রধান কোচের চাওয়াতে জিয়াসকে যুক্ত করা হয়েছে দলের সঙ্গে, প্রয়োজন থাকলে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকবেন তিনি।
বিভিন্ন দলের অনুশীলনে জিয়াসের কদর থাকলেও ভারতীয় এই স্পিনার স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখতে পারেননি। ৩১ বছর বয়সী এই স্পিনার ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের ভালো পর্যায়েও খেলতে পারেননি। আইপিএলে একবার ডাক পেয়ে বসে থেকেছেন সাইড বেঞ্চে, নিজের রাজ্যের হয়ে জিয়াসের খেলা হয়নি রঞ্জি ট্রফি, দিলীপ ট্রফি, সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফির মতো টুর্নামেন্টে।
বিভিন্ন দলের নেটে বোলিং করেই 'অন্যরকম' একটা খ্যাতি পেয়ে যাওয়া জিয়াসকে ডাকা হয়, 'দ্য কেরালা ম্যাক্সওয়েল' নামে। ভারতীয় এই স্পিনারের বন্ধুরা তাকে এই নামে ডাকেন। অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে চেহারার মিল থাকায় মূলত এই উপাধি মিলেছে তার। দলে ভূমিকা স্পিনারের হলেও মাঝেমধ্যে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারার কারণেও তাকে কেরালার ম্যাক্সওয়েল ডাকা হয়।