দীর্ঘ অপেক্ষার পর আপন আলোয় আলোকিত শান্ত
চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পর তামিম ইকবাল জানান, এক সময় ভেবেছিলেন ম্যাচটা বুঝি হাত থেকে ফস্কেই গেছে। কেনই বা ভাববেন না? আয়ারল্যান্ডের শুরুর পাঁচজনের চারজনই রান পেয়েছেন। সাত উইকেট হাতে থাকা অবস্থায় ৪০ ওভার শেষে আয়ারল্যান্ডের চাই ওভারপ্রতি ছয়ের কিছু বেশি রান। বাংলাদেশের দরকার ব্রেক-থ্রু। কী ভেবে তামিম বল তুলে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে।
সিরিজে শান্ত যা-ই করেছেন, তাতেই মিলেছে সাফল্য। এটাই কি ভেবেছিলেন তামিম? তাতে কী যায় আসে! আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি টেক্টরকে আউট করে শান্ত বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনলেন ম্যাচে, পেলেন ওয়ানডেতে নিজের প্রথম উইকেট। আগের ম্যাচে পান প্রথম সেঞ্চুরি। ওয়ানডে অভিষেকের পাঁচ বছর পর প্রথম সিরিজসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে শান্ত এগিয়ে রাখলেন এই সেঞ্চুরিকেই।
অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শান্তকে অভিষেকের আগে থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের তারকা ও ভবিষ্যৎ অধিনায়ক ভাবা হতো। কিন্তু বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ছিলো ধারাবাহিকতার অভাব। সাবেক প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে নিয়মিত প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হতো শান্তকে টানা সুযোগ দেওয়ার জন্য।
গত বছরের ডিসেম্বরে শান্তকে সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে বলতে গিয়ে ডমিঙ্গো টেনেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের উদাহরণ, 'আমি অনেক বড় ক্রিকেটারের নাম বলতে পারব যাদের গড় ২০-২৫ ম্যাচের পর ২০ এর মতো ছিল। ১২ ম্যাচ পর জ্যাক ক্যালিসের গড় ছিলো ১২ (আসলে ২৫)। পরবর্তীতে সে বড় ক্রিকেটার হয়েছে।'
চলতি বছরের শুরুতে শান্তর ওয়ানডে গড় ছিলো ১৪ ও স্ট্রাইক রেট ছিলো ৬০। পাঁচ বছর অপেক্ষার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। এখান থেকেই মিলে যায় এতোদিন ধরে খুঁজে আসা পথ, এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৫০০ রানের মাইলফলক ছোঁয়া শান্ত ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি হাফ সেঞ্চুরির পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলেন টানা তিনটি চল্লিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস, জিতে নেন সিরিজসেরার পুরস্কার। চলতি বছর ওয়ানডেতে শান্তর গড় পেরিয়েছে ৫০, স্ট্রাইক রেট ৮৮.২।
উদ্বোধনী জুটি বড় না হওয়ায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শান্তকে সামলাতে হয়েছে নতুন বল। দারুণ ফুটওয়ার্কে আইরিশ বোলারদের লাইন লেংথ এলোমেলো করে দিয়েছেন প্রতি ম্যাচেই, ডাউন দ্য পিচে এসে সুইং সামাল দেওয়ার তার কৌশলও কাজে লেগেছে৷ ইংলিশ কন্ডিশনে শর্ট বলও ভালো সামলেছেন টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
ব্যাটিংয়ের বাইরে চোখে পড়েছে শান্তর ফিল্ডিং ও নেতৃত্বগুণ। দলের সেরা ফিল্ডার হিসেবে ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমটের কাছ থেকে বেশ কবার বুঝে নিয়েছেন 'গোল্ডেন স্টাম্প' পুরস্কার। তৃতীয় ওয়ানডেতে শেষ ওভারে হাসান মাহমুদ যখন বোলিং করছিলেন, তখন ডিপ কাভার থেকে দৌঁড়ে এসে তাকে পরামর্শ দেন শান্ত।
পাঁচ মাস পর বাংলাদেশ অংশ নেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এই মুহূর্তে শান্তর ফর্ম আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। অথচ কিছুদিন আগেও ঘরের মাঠে দুয়োধ্বনি শুনতে হতো শান্তকে। সংবাদ সম্মেলনে তাকে বলতে দেখা যায় পরিবার নিয়ে খারাপ লাগার কথা। সেই শান্তই সুদূর ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ড কাউন্টি গ্রাউন্ডে দর্শকদের তুমুল চিৎকার আর করতালিতে হাতে তুললেন সিরিজসেরার পুরস্কার।