জীর্ণ ব্যাটিং-বোলিংয়ে বিশাল হার
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরুর করার পর শারীরিক ভাষায় পরিবর্তন এসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। সুপার টুয়েলভে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ কিছু করে দেখানোর প্রত্যয়ের কথা ছিল সাকিব আল হাসানদের মুখে। কিন্তু মাঠে নেমে মিললো না সুর, তাল, লয়ের কিছুই। নখদন্তহীন বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতে চললো আসা-যাওয়ার মিশন। তাতে মেনে নিতে হলো বিশাল হার।
বৃহস্পতিবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এক পেশে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে রানের হিসেবে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার, স্বাভাবিকভাবে বিশ্বকাপেও তাই। এরআগে ২০১৬ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৫ রানের হারের ব্যবধানটিই ছিল সবচেয়ে বড়। অন্যদিকে বিশ্বকাপে এটা দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতেই হোঁচট খেলেও তাদের ইনিংসে সেটার প্রভাব পড়েনি। ম্যাচসেরা রাইলি রুশোর ঝলমলে সেঞ্চুরি ও কুইন্টন ডি ককের ব্যাটে ৫ উইকেটে ২০৫ রানের বিশাল সংগ্রহ তোলে প্রোটিয়ারা। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে হতশ্রী ব্যাটিংয়ে আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেওয়া বাংলাদেশ ১৬.৩ ওভারে ১০১ রানেই অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান ৩৪। এ ছাড়া দুই অঙ্কের রান করা তিন জনের মধ্যে কেউ ২০ রানও পেরোতে পারেননি।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে তেড়েফুঁড়ে শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার। প্রথম ওভার থেকেই ১৭ রান তোলেন তারা। শান্ত একটি চার ও সৌম্য টানা দুটি ছক্কা মারেন। ২ ওভারে ২৬ রান তোলেন তারা। কিন্তু তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন ৬ বলে ২টি ছক্কায় ১৫ রান করা সৌম্য।
এক রান পরই ফিরে যান শান্ত, ৯ বলে ৯ রান করেন তিনি। এখান থেকে যে উইকেট বৃষ্টি শুরু হয়, তা আর থামাতে পারেনি বাংলাদেশ। কেবল লিটন কুমার দাস কিছুটা সময় লড়াই করেন। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩১ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন। এ ছাড়া মেহেদী হাসান মিরাজ ১১ ও তাসকিন আহমেদ ১০ রান করেন। বাকিদের কেউ দুই অঙ্কের ঘেরে যেতে পারেননি।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ১, আফিফ হোসেন ধ্রুব ১, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ০ ও নুরুল হাসান সোহান ২ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ডানহাতি পেসার আনরিক নরকিয়া অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ৩.৩ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নেন। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসি ২০ রানে নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট পান কাগিসো রাবাদা ও কেশব মহারাজ।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম ওভারেই বিপদে ফেলেন তাসকিন। বাংলাদেশের ডানহাতি এই পেসারের দারুণ এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৬ বলে ২ রান করা বাভুমা। ২ রান খরচায় একটি উইকেট নিয়ে স্বপ্নের মতোই শুরু করেন তাসকিন। কিন্তু শুরুর ধাক্কা তুলে ঝড় তুলতে একেবারেই সময় নেননি রুশো ও ডি কক।
পাওয়ার প্লে ৬ ওভার থেকে ৬৩ রান তোলেন এ দুজন। এরপরও অবশ্য একই ছন্দে ব্যাটিং করে যান এ দুজন, সাজান চার-ছক্কার ফুলঝুরি। এ সময় প্রোটিয়া এই দুই ব্যাটসম্যানের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন বাংলাদেশের বোলাররা। চোখ জুড়ানো ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৮৫ বলে ১৬৮ রানের জুটি গড়েন। যারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেকেনো উইকেটে বিশ্বরেকর্ড, টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সেরা জুটির রেকর্ড।
ডি কককে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ফেরার আগে ৩৩৮ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৩ রান করেন ডি কক। এরপর একাই ঝড় চালিয়ে যান রুশো। খুনে ব্যাটিংয়ে মাত্র ৫২ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, এটা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৫৬ বলে ৭টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১০৯ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলেন রুশো। এইডেন মার্করাম করেন ১০ রান।
সবচেয়ে বেশি ১৫.৩৩ ইকোনমিতে ৩ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে এক উইকেট নেন তাসকিন। হাসান ৪ ওভারে ৩৬ রানে একটি উইকেট নেন। মিরাজ ৩ ওভারে ৩২ রানে কোনো উইকেট পাননি। ২ উইকেট নেওয়া সাকিব ৩ ওভারে দেন ৩৩ রান। আফিফ ১ ওভারে ১১ রানে নেন এক উইকেট। উইকেট না পেলেও কিপ্টে বোলিং করেন মুস্তাফিজ, ৪ ওভারে ২৫ রান রান দেন তিনি। মোসাদ্দেক ২ ওভারে খরচা করেন ১৬ রান।